বেঙ্গালুরুতে (Bengaluru) ঘটে গেল এক শিউরে ওঠার মতো নারকীয় ঘটনা। ঝোপের ভেতর থেকে একটি কুকুর মুখে করে কাটা হাত নিয়ে বেরিয়ে আসার দৃশ্য দেখেই হকচকিয়ে যান পথচারীরা। এই দৃশ্যের সূত্র ধরেই ধাপে ধাপে উন্মোচিত হয় এক ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের রহস্য। ৫ দিনের মাথায় এই নৃশংস মামলার কিনারা করে ফেলল কোরাটাগেরে পুলিস।
ঘটনা শুরু হয় ৭ আগস্ট সকালে। কর্ণাটকের তুমাকুরুর চিম্পাগানাহাল্লির রাস্তার ধারে কয়েকজন পথচারী দেখতে পান, একটি কুকুর মুখে করে একটি কাটা হাত নিয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন স্থানীয় থানায়। কোরাটাগেরে পুলিস তদন্তে নেমে আশপাশের এলাকা তল্লাশি শুরু করে।
পরদিন, অর্থাৎ ৮ আগস্ট, কোরাটাগেরে পুলিস ভয়ঙ্কর এক আবিষ্কার করে। কোলালা গ্রামের রাস্তার ধারে ও ঝোপঝাড়ের ভিতর থেকে সাতটি প্লাস্টিকের ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। ব্যাগগুলির ভিতরে ছিল আংশিক পচাগলা ও বিকৃত দেহাংশ—মোট ১৯টি টুকরো। এর মধ্যে ছিল দুটি কাটা হাত, দুটি হাতের তালু, কিছু মাংসের টুকরো, অন্ত্রের অংশ এবং একটি মানবমুণ্ড।
পুলিসের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, মৃত মহিলার নাম লক্ষ্মী দেবী (৪২)। তিনি তুমাকুরুর বাসিন্দা ছিলেন। তদন্তে নাম উঠে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য—লক্ষ্মী দেবীর জামাই, পেশায় দন্ত চিকিৎসক রামচন্দ্রপ্পা এস এই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত। তার সঙ্গে ছিল আরও দুই সহযোগী—সতীশ কে.এন এবং কিরণ কে.এস।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, শাশুড়ি লক্ষ্মী দেবী তাঁর জামাই রামচন্দ্রপ্পার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে আচরণ ও অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ নিয়েই তাঁদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্য চলছিল। সেই আক্রোশ থেকেই পরিকল্পিতভাবে শাশুড়িকে খুন করেন রামচন্দ্রপ্পা।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, খুনের পর প্রমাণ লোপাটের জন্য মৃতদেহ কেটে ১৯ টুকরো করা হয়। এরপর সেগুলো সাতটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে আলাদা আলাদা স্থানে ফেলে দেওয়া হয়, যাতে দেহাংশ উদ্ধার করলেও চিহ্নিত করা কঠিন হয়। কিন্তু ভাগ্যের খেলায় ঝোপের ভিতর থেকে কুকুরের কাটা হাত মুখে করে বেরিয়ে আসা গোটা মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
তদন্তে নেমে পুলিস সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল লোকেশন ও ফরেনসিক প্রমাণের সাহায্যে রামচন্দ্রপ্পা ও তাঁর দুই সহযোগীকে চিহ্নিত করে। পরে তাঁদের গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়। বর্তমানে অভিযুক্তরা পুলিস হেফাজতে রয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এই ঘটনা কর্ণাটক তথা গোটা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ হতবাক, কীভাবে একজন শিক্ষিত দন্ত চিকিৎসক এমন নৃশংস অপরাধ ঘটাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা শুধু পারিবারিক বিবাদ নয়, বরং পরিকল্পিত ও ঠান্ডা মাথার খুনের নিদর্শন।
পুলিস জানিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে আরও কিছু তথ্য গোপন রাখা হচ্ছে। তবে আদালতে চার্জশিট দাখিলের সময় গোটা পরিকল্পনা ও হত্যাকাণ্ডের প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হবে। এই ঘটনার রেশ অনেকদিন ধরে কর্ণাটকের মানুষের মনে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।