মিজোরামকে (Mizoram) পর্যটনের ক্ষেত্রে একটি শীর্ষ গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে মিজোরাম সরকারের পর্যটন বিভাগ এবং ভারতীয় রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন (আইআরসিটিসি), যা রেল মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পাবলিক সেক্টর প্রতিষ্ঠান, সম্প্রতি একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে।
এই দুই বছরের চুক্তি আইজলে ৭ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে। মিজোরাম পর্যটন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক লালথাকিমি পাচুয়াও এবং আইআরসিটিসি’র গুয়াহাটির প্রধান আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আরএন রানমুং এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এই সমঝোতা মিজোরামের পর্যটন পরিকাঠামো, আকর্ষণ এবং দৃশ্যমানতা বৃদ্ধির জন্য একটি কাঠামোগত এবং সহযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে। এই পদক্ষেপ মিজোরামের পর্যটন খাতে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই সমঝোতা স্মারকের মূল লক্ষ্য হলো মিজোরামের পর্যটন সম্ভাবনাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরা। এর মধ্যে রয়েছে যৌথ প্রচারণা, পর্যটকদের জন্য সহজ ও ব্যবহারবান্ধব ভ্রমণ ব্যবস্থা, কাস্টমাইজড ভ্রমণ পরিকল্পনা এবং পর্যটকদের পদচারণা বৃদ্ধির কৌশলগত উদ্যোগ।
আইআরসিটিসি’র জাতীয় নেটওয়ার্ক এবং পর্যটন ব্যবস্থাপনার দক্ষতার সঙ্গে মিজোরামের অনন্য সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সম্পদকে একত্রিত করে এই চুক্তি রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এছাড়া, মিজোরামের বাসিন্দাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের আউটবাউন্ড ভ্রমণ প্যাকেজ প্রবর্তনের মাধ্যমে তাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের সুযোগ প্রদান করা হবে।
এই চুক্তির সময়টি অত্যন্ত কৌশলগত। বায়রাবি-সাইরাং নতুন রেললাইন প্রকল্পের মাধ্যমে মিজোরামের রাজধানী আইজল ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারতীয় রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চলেছে। এই রেল সংযোগ মিজোরামের ভ্রমণ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করবে।
এই উন্নত সংযোগের সুযোগ কাজে লাগিয়ে আইআরসিটিসি অক্টোবর ২০২৫ থেকে মিজোরামে একটি বিশেষ পর্যটন ট্রেন চালু করার পরিকল্পনা করেছে। এই ট্রেনটি “ডিসকভার এনই বিয়ন্ড গুয়াহাটি” কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিজোরামকে একটি মুখ্য গন্তব্য হিসেবে প্রচার করবে। এই উদ্যোগ মিজোরামকে আরও সহজলভ্য এবং আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করবে।
মিজোরাম তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং উৎসবের জন্য বিখ্যাত। পান্না সবুজ উপত্যকা, ঘন সবুজ পাহাড়, নির্মল ঝর্না এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এছাড়া, মিজো সম্প্রদায়ের বর্ণিল উৎসব, বাঁশের নৃত্য, ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত এবং আনুষ্ঠানিক রীতিনীতি পর্যটকদের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
মিজোরাম অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমেও ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যেমন ট্রেকিং এবং রিভার স্পোর্টস। এই চুক্তির মাধ্যমে আইআরসিটিসি এবং মিজোরাম সরকার স্থানীয় ডেস্টিনেশন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এবং পরিষেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে কাজ করে পরিবহন, থাকার ব্যবস্থা এবং দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের জন্য বিশেষ প্যাকেজ তৈরি করবে।
এই সমঝোতা মিজোরামের পর্যটন খাতে একটি রূপান্তরকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উৎসাহিত করবে। স্থানীয় পর্যটন অবকাঠামো যেমন ট্যুরিস্ট লজগুলির উন্নতি এবং স্থানীয় পরিষেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা মিজোরামের পর্যটন খাতকে আরও শক্তিশালী করবে। এছাড়া, মিজোরামের বাসিন্দাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্রমণ প্যাকেজ জাতীয় একীকরণ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করবে।
এক্স প্ল্যাটফর্মে এই চুক্তি নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “মিজোরামের প্রথম রেল সংযোগ এবং আইআরসিটিসি’র সঙ্গে এই চুক্তি রাজ্যের পর্যটন ও অর্থনীতির জন্য গেম-চেঞ্জার।” আরেকটি পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “মিজোরামের সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশ্বের কাছে তুলে ধরার এটি একটি দুর্দান্ত উদ্যোগ।” তবে, কিছু ব্যবহারকারী টেকসই পর্যটনের উপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে রাজ্যের ভঙ্গুর পরিবেশের ক্ষতি না হয়।
ভোটার তালিকা অনিয়মে মুখ্যসচিবকে তলব নির্বাচন কমিশনের
মিজোরাম সরকার এবং আইআরসিটিসি’র এই সমঝোতা রাজ্যের পর্যটন খাতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আইজলের আসন্ন রেল সংযোগ এবং বিশেষ পর্যটন ট্রেনের মাধ্যমে মিজোরাম পর্যটকদের জন্য আরও সহজলভ্য হবে। এই উদ্যোগ মিজোরামের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।