ভোটার তালিকা অনিয়মে মুখ্যসচিবকে তলব নির্বাচন কমিশনের

পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কাজে অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে ফের মুখোমুখি রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। সম্প্রতি কমিশনের তরফে আনা গুরুতর অভিযোগের জেরে রাজ্য…

ভোটার তালিকা অনিয়মে মুখ্যসচিবকে তলব নির্বাচন কমিশনের

পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কাজে অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে ফের মুখোমুখি রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। সম্প্রতি কমিশনের তরফে আনা গুরুতর অভিযোগের জেরে রাজ্য সরকার পাঁচ জন আধিকারিক ও কর্মীকে কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল এবং পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ তদন্তেরও ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এই ঘটনার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সোমবার রাতে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপের জবাবে সরাসরি পদক্ষেপ করল নির্বাচন কমিশন।

মঙ্গলবার কমিশনের পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে (Manoj Panth) ডেকে পাঠানো হয়েছে। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী বুধবার বিকেল ৫টায় সাক্ষাতের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সরকারি সূত্রে খবর, মুখ্যসচিব ব্যক্তিগতভাবে কমিশনের দপ্তরে হাজির হবেন না। বরং একটি বিস্তারিত রিপোর্ট আকারে চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যের পদক্ষেপ ও তদন্তের অগ্রগতি কমিশনকে জানাবেন। বর্তমানে রাজ্য প্রশাসনের উচ্চস্তরে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনারত রয়েছেন কর্তারা।

   

মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ইতিমধ্যেই পাঁচ আধিকারিক ও কর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন স্বরাষ্ট্র দফতরের এক সিনিয়র আধিকারিক। পাশাপাশি থাকবেন দুইজন অভিজ্ঞ প্রশাসনিক আধিকারিক। কমিটিকে যত দ্রুত সম্ভব প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত কমিটির আওতায় আসা পাঁচ জনের মধ্যে রয়েছেন দুই ইআরও (Electoral Registration Officer), দুই এআইআরও (Assistant Electoral Registration Officer) এবং একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। সরকারি সূত্রে খবর, অভিযুক্তদের সবাইকে তদন্ত কমিটির সামনে তলব করা হবে। প্রয়োজন হলে তাদের কাছ থেকে নথিপত্র, প্রমাণ এবং লিখিত জবাবও নেওয়া হবে।

রাজ্যের পক্ষ থেকে মুখ্যসচিব ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে পৃথকভাবে অন্তর্বর্তী তদন্ত শুরু হয়েছে এবং পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কমিশনের হাতে তুলে দেওয়া হবে। সরকারি সূত্রের দাবি, কমিশনের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রমাণ যাচাই না করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক হবে না। তাই ধাপে ধাপে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

Advertisements

ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কাজ নিয়ে নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে এই চাপানউতোর নতুন নয়। এর আগে বিভিন্ন জেলায় ভোটার তালিকা সংশোধন এবং নতুন নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এই ঘটনায় সরব হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনের কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে।

তবে রাজ্যের দাবি, কমিশনের নির্দেশ মেনে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনও রকম গাফিলতি হবে না। মুখ্যসচিবের দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তবে প্রমাণ মিললে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

এখন নজর আগামী বুধবারের দিকে, যখন কমিশন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী মুখ্যসচিবের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক রিপোর্ট পাবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, কমিশন যদি রাজ্যের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না পায়, তবে আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক মহলে যেমন আলোড়ন তৈরি হয়েছে, তেমনই রাজনৈতিক অঙ্গনেও নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখতে এই তদন্ত কতটা কার্যকর হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।