পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা (DA) প্রদানের দাবিকে ঘিরে চলমান মামলার শুনানি ফের পিছিয়ে গেল। সুপ্রিম কোর্টে আগামী ২৬ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে পর পর তিন দিন শুনানি হলেও মঙ্গলবার (১২ অগস্ট) আদালতে মামলাটি তালিকাভুক্ত থাকলেও তা স্থগিত হয়ে যায়।
সূত্রের খবর, রাজ্যের প্রধান আইনজীবী তথা সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিবাল এ দিন অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানিতে ব্যস্ত থাকায় ডিএ মামলার শুনানি করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের বেঞ্চ এই মামলার শুনানির নতুন তারিখ ধার্য করে ২৬ অগস্ট।
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি— কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের মতো একই হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হোক। ২০১৬ সালের পর থেকে রাজ্যে এই দাবিকে ঘিরে আন্দোলন জোরদার হয়। কর্মচারী সংগঠনগুলির তরফে মামলা শুরু হয় স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে (SAT)। সেখান থেকে কলকাতা হাই কোর্টে গড়ায় মামলাটি।
২০২২ সালে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে রায় দেয়। আদালত জানায়, ডিএ শুধু সরকারের আর্থিক নীতির অংশ নয়, এটি সরকারি কর্মচারীদের ‘অধিকার’। সেই অনুযায়ী তারা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাওয়ার যোগ্য।
কলকাতা হাই কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার প্রথম শুনানি হয়। সেই থেকে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট এর মধ্যেই রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে বকেয়া ২৫ শতাংশ ডিএ মেটাতে। তবে রাজ্য এখনও সেই নির্দেশ কার্যকর করেনি এবং আদালতের কাছে অতিরিক্ত সময় চেয়েছে। সরকারি সূত্রে দাবি, রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি একসঙ্গে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধের পক্ষে অনুকূল নয়।
গত সপ্তাহে মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পর পর তিন দিন সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্র মামলার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখেন এবং পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করেন ১২ অগস্ট। কিন্তু নির্ধারিত দিনে কপিল সিবাল অন্য মামলায় ব্যস্ত থাকায় শুনানি পিছিয়ে যায়।
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আদালতের প্রতিটি তারিখে নতুন বিলম্ব তাঁদের হতাশ করছে। তাঁদের বক্তব্য, ডিএ নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতায় কর্মচারীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ না মেলায় তাঁদের মাসিক আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কম, যা জীবনযাত্রার মানে প্রভাব ফেলছে।
এখন নজর ২৬ অগস্টের দিকে, যেদিন সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি হবে বলে ঠিক হয়েছে। কর্মচারী সংগঠনগুলি আশা করছে, সেদিন হয়তো মামলার চূড়ান্ত রায় বা অন্তত কার্যকরী নির্দেশ আসতে পারে। অন্যদিকে, রাজ্য সরকারও নিজেদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই মামলার ফলাফল শুধু পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৯ লক্ষ সরকারি কর্মচারীর জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের আর্থিক নীতি ও রাজ্য-কেন্দ্র সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।