বাণিজ্য উত্তেজনা কমতেই তেলের দামে বৃদ্ধি

মঙ্গলবার বৈশ্বিক তেলবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের বিরতি আরও নব্বই দিনের জন্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পদক্ষেপ…

Oil Imports

মঙ্গলবার বৈশ্বিক তেলবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের বিরতি আরও নব্বই দিনের জন্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ কমিয়ে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের দুই বৃহত্তম তেলভোক্তা দেশ যদি ভবিষ্যতে বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিঘ্ন এড়াতে পারে, তবে জ্বালানি চাহিদা স্থিতিশীল বা বাড়তে পারে।

তেলের দাম সামান্য বেড়েছে:
মঙ্গলবার ভোরে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের ফিউচার মূল্য ২৬ সেন্ট বা ০.৩৯ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৬.৮৯ ডলারে লেনদেন হয়। একই সময়ে, মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) ক্রুডের মূল্য ২২ সেন্ট বা ০.৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৪.১৮ ডলারে পৌঁছায় বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

   

শুল্ক বিরতি বাজারে স্বস্তি আনল:
সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে, চীনের সঙ্গে বিদ্যমান শুল্ক বিরতি আরও নব্বই দিন বাড়ানো হবে। এর ফলে চীনা আমদানির ওপর নতুন করে শতকরা তিন অঙ্কের হারে শুল্ক আরোপ আপাতত বন্ধ থাকবে। বিশেষ করে বছরের শেষভাগে বড়দিন ও নববর্ষের কেনাকাটার মৌসুম সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা ব্যবসায়ীরা এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

এতে আশা জেগেছে যে, ওয়াশিংটন ও বেইজিং একটি বৃহত্তর বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের স্থবিরতা কাটাতে সাহায্য করবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, শুল্ক কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মন্থর করে না, বরং বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদাও কমিয়ে দেয়, যা তেলের দামে নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি করে।

নজর এখন ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে:
বাণিজ্য উত্তেজনার বাইরে, বাজার এখন তাকিয়ে আছে আগামী ১৫ আগস্ট আলাস্কায় নির্ধারিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের দিকে। এই বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়িয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হলে চীন ও ভারতসহ যেসব দেশ রুশ তেল কিনছে, তাদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
এএনজেড ব্যাংকের সিনিয়র পণ্য কৌশলবিদ ড্যানিয়েল হাইনস বলেছেন, “রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যেকোনো শান্তিচুক্তি রুশ তেলের সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটার ঝুঁকি দূর করবে, যা গত কয়েক মাস ধরে বাজারে চাপ সৃষ্টি করেছিল।”

Advertisements

ট্রাম্প আগেই মস্কোকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শান্তিচুক্তিতে না পৌঁছালে রুশ তেল ক্রেতাদের ওপর গৌণ নিষেধাজ্ঞা (secondary sanctions) আরোপ করা হবে। ভারত ও চীনকে ইতিমধ্যেই রুশ ক্রুড কেনা কমাতে বলা হয়েছে। বেইজিংকে আরও জানানো হয়েছিল, নির্দেশ না মানলে তাদের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। তবে আলাস্কার বৈঠকের আগে এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির তথ্যের অপেক্ষায় বাজার
এদিকে বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ মুদ্রাস্ফীতির তথ্যের দিকে নজর রাখছেন, যা আজ প্রকাশিত হওয়ার কথা। এই তথ্য থেকে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

যদি এমন ইঙ্গিত মেলে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিকট ভবিষ্যতে সুদের হার কমানোর কথা ভাবছে, তবে তা তেলের দামের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। কারণ সুদের হার কমলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আসে, যা জ্বালানির চাহিদা বাড়ায়।

বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা, তবে ইতিবাচক সুর:
যদিও বৈশ্বিক তেলবাজার এখনো অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে—যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মার্কিন-চীন বাণিজ্য সম্পর্ক, এবং মুদ্রাস্ফীতি—তবুও সাম্প্রতিক শুল্ক বিরতি ও শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা বাজারে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আগামী কয়েক সপ্তাহে তেলের দামে ওঠানামা অব্যাহত থাকতে পারে, কারণ বাজার একদিকে বাণিজ্য আলোচনার অগ্রগতি এবং অন্যদিকে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার দিকেও সমানভাবে নজর রাখবে।