মহাকাশ অভিযানে ভারতের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়াল অ্যাক্সিওম স্পেস

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা অ্যাক্সিওম স্পেস ( Axiom Space) ভারতের সঙ্গে তার অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ভবিষ্যতে মানব মহাকাশ যাত্রা…

Axiom Space with India

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা অ্যাক্সিওম স্পেস ( Axiom Space) ভারতের সঙ্গে তার অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ভবিষ্যতে মানব মহাকাশ যাত্রা এবং মহাকাশ স্টেশন উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সম্প্রতি অ্যাক্সিওম-৪ মিশনের অংশ হিসেবে ভারতীয় মহাকাশচারী গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লাকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পাঠানোর পর এই ঘোষণা এসেছে।

অ্যাক্সিওম স্পেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তেজপাল ভাটিয়া ভারতের মহাকাশ খাতে ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে বলেছেন, এই সহযোগিতা আমেরিকা, ভারত, নাসা, ইসরো এবং অ্যাক্সিওমের মধ্যে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।

   

অ্যাক্সিওম-৪ মিশনটি ২৫ জুন, ২০২৫ তারিখে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটে করে উৎক্ষেপণ করা হয়। এই মিশনে ভারতের শুভাংশু শুক্লা, পোল্যান্ডের স্লাওয়োজ উজনানস্কি এবং হাঙ্গেরির তিবোর কাপু অংশ নিয়েছেন, যারা প্রথমবারের মতো আইএসএস-এ গিয়েছেন।

এই মিশনটি ভারতের মানব মহাকাশ যাত্রায় একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, কারণ এটি ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মার পর ভারতের দ্বিতীয় মহাকাশচারী মিশন। মিশনটি নাসা, ইসরো, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ) এবং স্পেসএক্স-এর সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছে।

অ্যাক্সিওম স্পেস ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এবং ভারতীয় স্টার্টআপ স্কাইরুট অ্যারোস্পেসের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করছে। ২০২৫ সালের জুন মাসে অ্যাক্সিওম স্পেস এবং স্কাইরুট অ্যারোস্পেস একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে, যার লক্ষ্য নিম্ন পৃথিবী কক্ষপথে (এলইও) মহাকাশ গবেষণা এবং অ্যাক্সেস উন্নত করা।

স্কাইরুট অ্যারোস্পেস, ভারতের প্রথম বেসরকারি রকেট উৎক্ষেপণকারী সংস্থা হিসেবে পরিচিত, তাদের ভিক্রম-১ রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে পে-লোড পাঠানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অ্যাক্সিওমের সিইও তেজপাল ভাটিয়া বলেছেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব মহাকাশ অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আমরা স্কাইরুটের সঙ্গে মিলে গবেষণা পে-লোড, অরবিটাল ডেটা সেন্টার এবং অন্যান্য মিশনের জন্য কাজ করতে চাই।”

অ্যাক্সিওম স্পেস বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা করছে, যার প্রথম মডিউল ২০২৭ সালের মধ্যে আইএসএস-এর সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এই মহাকাশ স্টেশনটি ২০৩১ সালে আইএসএস ডি-অরবিট হওয়ার আগে একটি স্বাধীন স্টেশন হিসেবে কাজ করবে। এই স্টেশনে আটজন মানুষ বসবাস ও কাজ করতে পারবে, এবং এটি মডুলার ও সম্প্রসারণযোগ্য হবে।

Advertisements

ভারত এই প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করবে, বিশেষ করে গবেষণা এবং প্রযুক্তি উন্নয়নে। অ্যাক্সিওম ইতিমধ্যে নাসার আর্টেমিস মিশনের জন্য মহাকাশ স্যুট তৈরি করছে, এবং ভারতের সঙ্গে এই সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বড় মিশনের পথ প্রশস্ত করবে।

ভারতের মহাকাশ খাত গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। চন্দ্রযান-৩ মিশনের মাধ্যমে ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম দেশ হিসেবে অবতরণ করেছে, এবং আদিত্য এল-১ মিশন সূর্যের উপর অভূতপূর্ব তথ্য সংগ্রহ করেছে। অ্যাক্সিওম-৪ মিশনে শুভাংশু শুক্লার অংশগ্রহণ ভারতের গগনযান প্রোগ্রামের জন্য একটি পূর্বসূরী হিসেবে কাজ করছে।

অ্যাক্সিওম-৪ মিশন ২০২৭ সালে ভারতীয় মহাকাশচারীদের নিম্ন পৃথিবী কক্ষপথে পাঠানোর লক্ষ্য রাখে। গগনযান প্রোগ্রামের জন্য ২০,১৯৩ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে, এবং এটি ভারতীয় মহাকাশ স্টেশন (ভারতীয় অন্তরীক্ষ স্টেশন) ২০৩৫ সালের মধ্যে স্থাপন এবং ২০৪০ সালের মধ্যে চাঁদে মানব অবতরণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

অ্যাক্সিওম-৪ মিশনে ৬০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে ভারতের ১২টি পরীক্ষা রয়েছে। এই পরীক্ষাগুলির মধ্যে রয়েছে মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে ফসল চাষ, টার্ডিগ্রেডের স্থিতিস্থাপকতা এবং মানব শরীরের উপর মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব। এই গবেষণাগুলি ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদী মিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে।

বিরোধীদের তোপে বিচারপতি ভার্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট নোটিস

অ্যাক্সিওম স্পেস এবং ভারতের মধ্যে এই অংশীদারিত্ব ভারতকে মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। অ্যাক্সিওম-৪ মিশনের সাফল্য এবং স্কাইরুটের সঙ্গে সহযোগিতা ভারতের মহাকাশ খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এই সহযোগিতা কেবল ভারতের মহাকাশ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে না, বরং বিশ্বব্যাপী মহাকাশ অর্থনীতিতে ভারতের নেতৃত্বকে আরও জোরদার করবে।