তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (abhishek banerjee ) মুখে ফের তীব্র রাজনৈতিক বার্তা। মঙ্গলবার সকালে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি কেন্দ্র ও নির্বাচন কমিশনকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। প্রসঙ্গ উঠে আসে সাম্প্রতিক SIR (Special Investigation Report) নিয়ে বিরোধীদের আপত্তির। অভিষেক স্পষ্ট জানান, তাঁর বা তাঁর দলের SIR-এ আপত্তি নেই, কিন্তু তা করতে হলে আগে বর্তমান লোকসভা ভেঙে দিয়ে নতুন ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নির্বাচন হোক।
অভিষেক(abhishek banerjee ) বলেন, “আপনারা দেখেছেন গতকালের মিছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ছিল। লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন জনপ্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন। এতদিন পার হওয়ার পরেও আমাদের ডিজিটাল ভোটার লিস্ট দেওয়া হচ্ছে না কেন? কেন হঠাৎ করে জোরপূর্বক SIR করা হবে? এই প্রশ্নগুলো নিয়েই আমরা কমিশনের সদর দফতরের সামনে মিছিল করেছি। কিন্তু আমাদের ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। বরং পুলিশ অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে, বর্বরতার সঙ্গে আচরণ করেছে। মানুষ নিজের চোখে দেখেছেন কীভাবে আমাদের আটকানোর চেষ্টা হয়েছে।”
তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে যখন তৃণমূল মিছিল করেছিল, তখনও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে থাকা পুলিশ একইভাবে হামলা চালিয়েছিল। “আমরা আগে থেকেই বলেছি, গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। আন্দোলনে শামিল হওয়া মানে এখন শাসক দলের চোখে অপরাধ করা,” অভিযোগ অভিষেকের।
এরপরই আসে তাঁর বিস্ফোরক মন্তব্য—“যদি কমিশনের সব দাবি আমরা না-মানি, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে—এই ভোটার তালিকার ভিত্তিতেই তো দেশে লোকসভা নির্বাচন হয়েছে। এই তালিকার ভিত্তিতেই প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তাহলে তাঁদের আগে পদত্যাগ করা উচিত। বিজেপি মাস ছয়েক আগে যেসব রাজ্যে এই তালিকা ব্যবহার করে ক্ষমতায় এসেছে, সেখানে প্রথমে পদত্যাগ করান। তারপর আমরা-ও পদত্যাগ করব। লোকসভা ভেঙে দিন। সারাদেশে নতুন তালিকায় SIR করুন, তারপর নির্বাচন হোক। আপনাদের যদি দৃষ্টান্ত স্থাপন করার সাহস থাকে, তাহলে এভাবেই করুন।”
এদিনের বক্তব্যে অভিষেকের (abhishek banerjee ) সুর স্পষ্ট—তিনি শুধুমাত্র বিরোধিতা করছেন না, বরং শাসক দলকে কটাক্ষের সঙ্গেই রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন। এর মধ্যেই তিনি দিল্লিতে দলের সাংসদদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন। জানা গিয়েছে, নয়াদিল্লির তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিসেই হবে এই বৈঠক। সেখানে উপস্থিত থাকবেন বর্ষীয়ান সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৈঠকে মূলত সাংসদদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি, সংসদে কৌশল এবং কেন্দ্রের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে বলে দলের সূত্রে খবর।
রাজনৈতিক মহলের মতে, অভিষেকের এই মন্তব্য শুধু বিরোধী ঐক্যের বার্তা নয়, বরং বিজেপিকে প্রকাশ্যে অস্বস্তিতে ফেলার কৌশল। তিনি জানিয়ে দিলেন, বিরোধীরা SIR এড়াতে চাইছে না, বরং চান সেটি যেন সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ হয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় শাসক দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রেও সমান নিয়ম প্রযোজ্য হোক—এই দাবি তোলাই তাঁর মূল উদ্দেশ্য।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এই ইস্যুতে বিরোধী দলগুলি একজোট হয়ে কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়াতে চাইছে। কারণ, ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা গেলে তা সরাসরি সরকারের উপর জনআস্থা ক্ষুণ্ণ করার হাতিয়ার হতে পারে।
সব মিলিয়ে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের(abhishek banerjee ) মঙ্গলবারের বক্তব্য দিল্লির রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল। তাঁর ‘লোকসভা ভেঙে দাও, তারপর SIR করো’—এই চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক অঙ্গনে কতটা সাড়া ফেলতে পারে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।