কলকাতা: নয়ডায় ভুয়ো থানা কাণ্ডে গ্রেফতার বীরভূমের বাসিন্দা বিভাস অধিকারীর একের পর এক কুকীর্তি প্রকাশ্যে আসছে। তদন্তে নেমে নয়ডা পুলিশ কলকাতার বুকে তাঁর প্রতারণা ও দুর্নীতির সাম্রাজ্যের পর্দা ফাঁস করতে শুরু করেছে। সূত্রের খবর, কলকাতার বেলেঘাটাতেও বাবা-ছেলে মিলে গড়ে তুলেছিল নকল থানার আস্তানা-যা ছিল আসলে তোলাবাজির আঁতুড়ঘর (fake police station scam)।
সিআইটি রোডে গড়ে ওঠা প্রতারণার সদর দফতর
পুলিশ জানিয়েছে, গত জুলাই মাসে বেলেঘাটার সিআইটি রোডে একটি তিনতলা বাড়ি মাসে ৪০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন বিভাস। সেখানেই প্রতিষ্ঠা করে ‘ন্যাশনাল ব্যুরো অফ সোশ্যাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড জাস্টিস’ নামের এক ভুয়ো সংস্থা। বিশাল হোর্ডিং আর কাচের দরজায় ‘US ইন্টারপোল’-এর স্টিকার লাগিয়ে তৈরি হয় প্রতারণার আবরণ। একই স্টিকার বিভাসের ছেলে তার ব্যক্তিগত গাড়িতেও ব্যবহার করত, যা দিয়ে শহরে চলত তোলাবাজির অভিযান।
স্থানীয়দের দাবি, কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জিত নিরাপত্তারক্ষীরা দিনরাত পাহারা দিত ওই ‘অফিসে’। দিনের পর দিন একাধিক গাড়ির আনাগোনা চললেও হঠাৎই একদিন সব উধাও হয়ে যায়। রাতারাতি খুলে ফেলা হয় সাইনবোর্ড, নিভে যায় নকল থানার বাতি। তদন্তকারীদের দাবি, এই সংস্থার নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে নোটিস পাঠিয়ে সংগঠিতভাবে অর্থ আদায় করত বিভাস অধিকারী।
নয়ডার ভুয়ো থানার ছায়া
বেলেঘাটার মতোই, নয়ডার সেক্টর ৭০-এ বিএস-১৩৬ নম্বর ঠিকানায় ‘ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অ্যান্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন’ নামের সাইনবোর্ড লাগিয়ে চলছিল আরেকটি নকল থানার কারবার। ভুয়ো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তৈরি হত ভুয়ো পরিচয়পত্র ও নথি, যা দেখিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে তোলা আদায় করা হতো। এমনকি ধৃতদের দাবি, ব্রিটেনেও তাদের একটি শাখা অফিস রয়েছে। তবে সম্প্রতি চালু হওয়ায় নয়ডার চক্রটি তেমনভাবে বিস্তার লাভ করতে পারেনি।
নিয়োগ দুর্নীতি থেকে রাজনৈতিক যোগ
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যুব তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা কুন্তল ঘোষ গ্রেফতার হওয়ার পর তদন্তে উঠে আসে বিভাসের নাম। একসময় বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি ছিল সে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য এবং অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গেও ছিল নিবিড় যোগাযোগ। গোরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর দলত্যাগ করে ‘অল ইন্ডিয়া আর্য মহাসভা’ নামে একটি নতুন দল গড়ে ফেলে বিভাস।
সব মিলিয়ে, বীরভূম থেকে নয়ডা হয়ে কলকাতা-ত্রিস্তরীয় প্রতারণার জাল বিস্তার করেছিল বিভাস অধিকারী ও তার ঘনিষ্ঠ মহল। তদন্তকারীরা নিশ্চিত, এই জাল ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে সামনে আসবে আরও বিস্ফোরক তথ্য।