ভোটের কাজে অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন যে চার জন অফিসারকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছিল, তা কার্যত মানেনি নবান্ন (Nabanna)। তবে সুর কিছুটা নরম করে কৌশলগতভাবে দু’জনকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরিয়েছে রাজ্য সরকার। সোমবার রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ এই মর্মে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালকে (Manoj Agarwala) চিঠি পাঠান।
কমিশনের তালিকায় ছিলেন বারুইপুর পূর্ব (১৩৭) কেন্দ্রের ইআরও দেবোত্তম দত্ত চৌধুরী, সহকারী ইআরও তথাগত মন্ডল, ময়না কেন্দ্রের ইআরও বিপ্লব সরকার ও এআইআরও সুদীপ্ত দাস। পাশাপাশি, ফর্ম-৬ প্রক্রিয়াকরণে যুক্ত ক্যাজুয়াল ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সুরজিত হালদারের বিরুদ্ধেও এফআইআর করার সুপারিশ করেছিল কমিশন।
চিঠিতে মুখ্য সচিব জানান, আপাতত চার অফিসার ও এক ডেটা এন্ট্রি কর্মীর বিরুদ্ধে সরাসরি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে। যুক্তি হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, জেলা ও ব্লক স্তরের অফিসারদের বহুমুখী দায়িত্ব থাকে এবং বহু সময় অধীনস্থ কর্মীদের উপর আস্থা রেখেই দায়িত্ব অর্পণ করতে হয়। যাঁরা এতদিন নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তের আগে সাসপেনশন দিলে তা অতি কঠোর মনে হতে পারে এবং প্রশাসনিক মহলে মনোবল ভেঙে যেতে পারে।
তবে আপাতত তমলুক ব্লকের পিএএও ও ময়না কেন্দ্রের সহকারী রিটার্নিং অফিসার সুদীপ্ত দাস এবং বারুইপুর পূর্ব কেন্দ্রের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সুরজিত হালদারের নির্বাচনী দায়িত্ব প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত রিপোর্ট কমিশনকে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্য সচিব।
পর্যবেক্ষকদের মতে, নবান্নের এই সিদ্ধান্তে সরকারের কৌশল স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন, কোনও অফিসারকে সাসপেন্ড করা হবে না, কারণ তাতে অফিসার মহলে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। তাই আপাতত সরকার তার অবস্থানে অনড় থেকেছে, একই সঙ্গে কমিশনের কড়া পদক্ষেপ ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, দুই ডব্লিউবিসিএস এক্সিকিউটিভ অফিসারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; পদক্ষেপ হয়েছে কেবল অধঃস্তন কর্মচারী ও কন্ট্রাকচুয়াল ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধে।
এখন নজর কমিশনের প্রতিক্রিয়ায়—তারা কি এই পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হবে, নাকি ফের নবান্নকে চিঠি পাঠাবে।