জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সিদ্ধান্তে বিরোধিতা মেহবুবার

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জম্মু-কাশ্মীরের (Mehbooba) লেফটেন্যান্ট গভর্নর (এলজি) মনোজ সিনহাকে আরও অধিকার প্রদান করে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন, ২০১৯-এর অধীনে নিয়ম সংশোধন করেছে। এই সংশোধনের ফলে…

Mehbooba opposes central govt

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জম্মু-কাশ্মীরের (Mehbooba) লেফটেন্যান্ট গভর্নর (এলজি) মনোজ সিনহাকে আরও অধিকার প্রদান করে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন, ২০১৯-এর অধীনে নিয়ম সংশোধন করেছে। এই সংশোধনের ফলে এলজির হাতে পুলিশ, জনশৃঙ্খলা, অল ইন্ডিয়া সার্ভিস (এআইএস) আধিকারিকদের বদলি, প্রসিকিউশন অনুমোদন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার বাড়ানো হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, এটি “লোকতান্ত্রিক নীতির লঙ্ঘন” এবং জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের অধিকারের উপর আঘাত। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই সংশোধনের ফলে ভবিষ্যতে নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী (সিএম) কোনও ক্ষমতাহীন পদে পরিণত হবেন, যা রাজ্যের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করে তুলবে।

   

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই সংশোধন জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন, ২০১৯-এর অধীনে নিয়মাবলীতে পরিবর্তন এনেছে। এর আগে, এলজির হাতে কিছু সীমিত অধিকার ছিল, কিন্তু এখন পুলিশ এবং জনশৃঙ্খলা বিষয়ক সিদ্ধান্ত, আইএএস এবং আইপিএস আধিকারিকদের বদলি, প্রসিকিউশন অনুমোদন, এবং অন্যান্য প্রশাসনিক প্রস্তাবগুলি চিফ সেক্রেটারির মাধ্যমে সরাসরি এলজির কাছে যাবে।

এই সংশোধনের ফলে এলজির ভূমিকা আরও শক্তিশালী হয়েছে, যা ২০১৯ সালে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, এই সংশোধন প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য করা হয়েছে, কিন্তু বিরোধী দলগুলি এটিকে কেন্দ্রের “অধিকার কেড়ে নেওয়ার” প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে, জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি এই সংশোধনকে “লোকতান্ত্রিক নীতির লঙ্ঘন” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “এই সংশোধন জম্মু-কাশ্মীরের জনগণকে একটি ক্ষমতাহীন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দিচ্ছে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভকে দুর্বল করছে এবং রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনের অধিকারকে খর্ব করছে।” মুফতি আরও বলেন, “যদি নির্বাচন হয়, তাহলে মুখ্যমন্ত্রী কেবল একটি রাবার স্ট্যাম্প হয়ে উঠবেন, যার হাতে কোনও বাস্তব ক্ষমতা থাকবে না।

এটি জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।” তাঁর এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে যখন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। মুফতি অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্র এই সংশোধনের মাধ্যমে রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে, যা ২০১৯ সালের পর থেকে চলমান কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের একটি অংশ।

জম্মু-কাশ্মীরের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারাও এই সংশোধনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ন্যাশনাল কনফারেন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর আবদুল্লাহ বলেন, “জনগণ একটি ক্ষমতাহীন মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। এই সংশোধন রাজ্যের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অসার করে তুলছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ নির্বাচনের আগে রাজ্যের প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদও এই সংশোধনকে “অসাংবিধানিক” বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিরোধী দলগুলি এটিকে “কেন্দ্রের অধিকার দখল” হিসেবে দেখছে।

Advertisements

তারা দাবি করছে যে এটি জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা পুনরুদ্ধারের দাবিকে আরও জোরদার করবে। অন্যদিকে, বিজেপি এই সংশোধনকে প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানোর পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে, এটি রাজ্যের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়।

২০১৯ সালে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর জম্মু-কাশ্মীরকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ। তখন থেকে এলজির ভূমিকা কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। এই সংশোধনের ফলে ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা সীমিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রের কৌশলগত পদক্ষেপ, যাতে নির্বাচিত সরকারের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা যায়। জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে উঠছে, এবং সুপ্রিম কোর্টও এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছে। এই সংশোধন এই দাবিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

সামাজিক মাধ্যমে এই সংশোধন নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। মেহবুবা মুফতির মন্তব্য শেয়ার করে অনেকে লিখেছেন, “জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।” কেউ কেউ এটিকে “কেন্দ্রের স্বৈরাচার” বলে আখ্যায়িত করেছেন।

বিজেপি সমর্থকরা বলছেন, এটি রাজ্যের স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয়। এই ঘটনা জম্মু-কাশ্মীরের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশ্বের ৫টি সবচেয়ে উন্নত ড্রোন যা যুদ্ধবিমানের চেয়ে কম শক্তিশালী নয়

কেন্দ্রীয় গৃহ মন্ত্রকের এই সংশোধন জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় পরিবর্তন এনেছে, যা লোকতান্ত্রিক নীতির লঙ্ঘন বলে মেহবুবা মুফতি অভিযোগ করেছেন। এটি রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। রাজনৈতিক মহলে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বাড়ছে, এবং এটি জম্মু-কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।