কলকাতা: চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের (Teacher) জন্য বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার জেরে চাকরি হারানো বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা এবার ফিরতে পারবেন তাঁদের পুরনো সরকারি চাকরিতে। ইতিমধ্যেই প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে নবান্ন। সূত্রের খবর, প্রথম পর্যায়ে ২০ জন প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে তাঁদের পূর্ববর্তী সরকারি দফতরে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সবুজ সংকেত মিলেছে।
রাজ্য সরকার জানিয়েছে, ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগের আগে এই ২০ জন ভিন্ন ভিন্ন সরকারি দফতরে কর্মরত ছিলেন। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁরা সেই চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতার পেশায় যোগ দেন। কিন্তু সাম্প্রতিক আদালতের রায় ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে তাঁদের চাকরি বাতিল হয়। এবার তাঁদের ফের আগের দফতরে পুনর্বহাল করা হচ্ছে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ২০ জনের মধ্যে ৫ জন স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্মী ছিলেন, যারা শিক্ষকতার জন্য পদত্যাগ করেছিলেন। এছাড়াও বিদ্যুৎ দফতর ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরেরও একাধিক কর্মী শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এখন তাঁদের পুরনো দফতরে ফেরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠানো হয়েছে যাতে দ্রুত পুনর্বহাল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪,৫০০-র বেশি চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা তাঁদের পুরনো চাকরিতে ফেরার জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিটি আবেদন নবান্নের মানবসম্পদ ও আইন দফতর দ্বারা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যোগ্য প্রমাণপত্র ও চাকরির ইতিহাস যাচাইয়ের পরই তাঁদের পুরনো দফতরে পুনর্বহালের চিঠি দেওয়া হবে।
শিক্ষক নিয়োগ মামলার জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা হঠাৎ করেই চাকরিহারা হয়ে পড়েন। আদালতের নির্দেশে তাঁদের নিয়োগপত্র বাতিল হলেও, তাঁদের জীবিকা রক্ষার স্বার্থে রাজ্য সরকার বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হয়। পুরনো চাকরিতে ফিরিয়ে দেওয়া হলে তাঁদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতারও সদ্ব্যবহার করা যাবে।
শিক্ষা মহলের একাংশের মতে, এই পদক্ষেপ মানবিক এবং বাস্তবসম্মত। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরির অভিজ্ঞতা থাকা কর্মীদের পুনর্বহাল প্রশাসনের পক্ষে লাভজনক। অন্যদিকে, শিক্ষক সংগঠনের একাংশ দাবি করেছে, শুধুমাত্র পুরনো সরকারি চাকরি থাকা ব্যক্তিরাই নয়, যাঁদের বিকল্প চাকরি নেই, তাঁদের পুনঃনিয়োগের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
নবান্ন সূত্রে খবর, প্রথম পর্যায়ে যাঁদের নথি ও চাকরির রেকর্ড স্পষ্ট, তাঁদের দ্রুত ফেরানো হবে। পরবর্তী পর্যায়ে বাকি আবেদনগুলি পর্যায়ক্রমে নিষ্পত্তি হবে। সরকারের লক্ষ্য আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অন্তত অর্ধেক আবেদন মঞ্জুর করা। এর ফলে বহু পরিবারের আর্থিক স্থিতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগ মামলার জেরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রাজ্যের এই পুনর্বহাল প্রক্রিয়া নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। যদিও এখনও হাজার হাজার আবেদন প্রক্রিয়াধীন, তবুও প্রথম পর্যায়ে ২০ জনকে পুরনো চাকরিতে ফেরানো একটি ইতিবাচক সূচনা। সরকারের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে, শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্কট মোকাবিলায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই হতে পারে কার্যকর সমাধান।