সমবায় সমিতি নির্বাচনে বিজেপির দাপট, তৃণমূল কংগ্রেস খাতাও খুলতে পারল না

মিলন পণ্ডা, চণ্ডীপুর: ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রামীণ রাজনীতিতে সমবায় সমিতির ফলাফল তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চণ্ডীপুর বিধানসভা…

সমবায় সমিতি নির্বাচনে বিজেপির দাপট, তৃণমূল কংগ্রেস খাতাও খুলতে পারল না

মিলন পণ্ডা, চণ্ডীপুর: ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রামীণ রাজনীতিতে সমবায় সমিতির ফলাফল তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চণ্ডীপুর বিধানসভা এলাকার ভগবানপুর ১ ব্লকের গুড়গ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের সমবায় সমিতি নির্বাচনে (Chandipur Cooperative Polls) বিজেপি ৬টি আসনে এবং সিপিএম ৩টি আসনে জয়লাভ করেছে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস একটি আসনেও জয়লাভ করতে পারেনি।

সমবায় সমিতির এই নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হয়। মোট ৯টি আসনের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি এবং সিপিএম সমর্থিত পৃথক প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সকাল থেকেই ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয় এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চণ্ডীপুর থানার পুলিশ মোতায়েন ছিল। ভোট গণনা শেষে স্পষ্ট হয়ে যায়—বিজেপি ৬টি আসন, সিপিএম ৩টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা কোনো আসনেই জয়ী হতে না পারায় শাসক শিবিরে চাপা অস্বস্তি ছড়িয়েছে।

   

বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ের পর গেরুয়া আবির উড়িয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন কর্মী ও নেতৃত্বরা। ভগবানপুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি সরাসরি বিজয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দন জানান। কাঁথি সংগঠনীক জেলার বিজেপি সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন,

“আগামী ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি আসনের মধ্যে ১৬টিতেই বিজেপি জিতবে। এই ফলাফল সেই লক্ষ্যের প্রমাণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপশাসনের বিরুদ্ধে মানুষ একজোট হচ্ছে।”

অন্যদিকে, তৃণমূল নেতৃত্বরা এই ফলাফলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের দাবি, সমবায় সমিতির নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রতীক থাকে না, তাই বিজেপির এই উল্লাস ‘অযথা রাজনৈতিক প্রচার’।

Advertisements

বাম শিবিরে অবশ্য খুশির হাওয়া। জেলা সিপিএম নেতৃত্বদের বক্তব্য, “তৃণমূল ও বিজেপি একে অপরের পরিপূরক। মানুষ সেই বাস্তব বুঝতে পেরে বামফ্রন্টের দিকে ঝুঁকছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমরা আরও ভালো ফল করব।”

চণ্ডীপুরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ফলাফলের তাৎপর্য কম নয়। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এখান থেকে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে চণ্ডীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারী লিড পেয়েছিলেন এবং কাঁথি লোকসভা আসনে জয়লাভ করেছিলেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ফলাফল আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক দলের জন্য সতর্কবার্তা। কারণ, গ্রামীণ স্তরে সমবায় সমিতির প্রভাব ভোটে সরাসরি প্রতিফলিত হয়। বিজেপি যেখানে এই ফলাফলকে ‘জনসমর্থনের বার্তা’ হিসেবে দেখছে, তৃণমূল সেখানে বিষয়টিকে তুচ্ছ করে দেখাতে চাইছে। তবে বামফ্রন্ট এই সুযোগে নিজেদের রাজনৈতিক জমি পুনর্গঠনের আত্মবিশ্বাসী সুরে কথা বলছে।

আগামী মাসগুলোতে পূর্ব মেদিনীপুরে সমবায় সমিতির আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন রয়েছে। সেসব ফলাফলও যে ২০২৬-এর বড় লড়াইয়ের জন্য রাজনৈতিক হাওয়া কোন দিকে বইবে তার ইঙ্গিত দেবে, তা নিয়ে সংশয় নেই।