কংগ্রেসের (Congress)সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ কেসি ভেনুগোপাল সোমবার দিল্লি পুলিশের বাধার মুখে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “দেশে গণতন্ত্র আর অবশিষ্ট নেই।” সংসদের মকর দ্বার থেকে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় নির্বাচন সদনের দিকে বিরোধী দলের সাংসদদের একটি বিক্ষোভ মিছিলের সময় দিল্লি পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয়।
এই মিছিলের উদ্দেশ্য ছিল বিহারে চলতে থাকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে “ভোট চুরি”র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। কেসি ভেনুগোপাল অভিযোগ করেছেন, “পুলিশ ও সরকার আমাদের ৩০ সেকেন্ডের জন্যও মিছিল করতে দিচ্ছে না।
তারা আমাদের এখানে আটকে রাখতে চায়। দেশে কী গণতন্ত্র আছে? সাংসদদের নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার স্বাধীনতা নেই। এখন তারা বলছে শুধু ৩০ জন যেতে পারবে, তাও তাদের নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।”
কংগ্রেসের লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে এই মিছিলে প্রায় ৩০০ জন সাংসদ অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, তৃণমূল কংগ্রেসের ডেরেক ও’ব্রায়েন, মহুয়া মৈত্র, সাগরিকা ঘোষ, ডিএমকে’র টি আর বালু, শিবসেনা (ইউবিটি)’র সঞ্জয় রাউত, এবং আরজেডি, সিপিআই, সিপিএম, এনসিপি (এসপি) এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের সাংসদরা।
মিছিল শুরুর আগে সাংসদরা মকর দ্বারে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে তাদের প্রতিবাদ শুরু করেন। তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার দাবি ছিল।
বিরোধী দলগুলি বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, যা তাদের মতে ভোটার তালিকায় কারচুপির মাধ্যমে ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা। রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ১,০০,০০০ ভোট “চুরি” হয়েছে।
তিনি দাবি করেছেন, একজন ব্যক্তির নাম একাধিক ভোটকেন্দ্রে তালিকাভুক্ত ছিল। তিনি ভোটার তালিকার ডিজিটাল ডেটা প্রকাশের দাবি জানিয়ে বলেছেন, “এটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে জালিয়াতি শনাক্ত করা যাবে।” কেসি ভেনুগোপাল এই প্রতিবাদকে “গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াই” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, এই মিছিলের জন্য কোনও আনুষ্ঠানিক অনুমতি নেওয়া হয়নি। ট্রান্সপোর্ট ভবনের কাছে পুলিশ ব্যারিকেড স্থাপন করে মিছিল আটকে দেয়। মহুয়া মৈত্র, অখিলেশ যাদব, এবং সুষ্মিতা দেব সহ কয়েকজন সাংসদ ব্যারিকেড টপকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
পুলিশ মেগাফোনে ঘোষণা করে সাংসদদের এগিয়ে যেতে বারণ করে। কেসি ভেনুগোপাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের ৩০ সেকেন্ডের জন্যও মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি ৩০ জন সাংসদকেও নির্বাচন কমিশনে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এটি গণতন্ত্রের পরিপন্থী।”নির্বাচন
নির্বাচন কমিশন রাহুল গান্ধীর অভিযোগকে “ভুল” বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং তাঁকে কথিত জালিয়াতি ভোটারদের তথ্য শপথপূর্বক জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে, কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশের অনুরোধে কমিশন ৩০ জন সাংসদের সঙ্গে দুপুর ১২টায় সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছে। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে সাংসদরা সেখানে পৌঁছাতে পারেননি।
এই ঘটনার জেরে লোকসভা ও রাজ্যসভা দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতুবি করা হয়। বিরোধী সাংসদরা সংসদে এই বিষয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন এবং প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। মিছিলে সাংসদরা লাল টুপি পরেছিলেন, যাতে লাল ক্রস দিয়ে “এসআইআর” এবং “ভোট চুরি” লেখা ছিল। তারা বিভিন্ন ভাষায় পোস্টার বহন করেন, যেখানে লেখা ছিল “এসআইআর + ভোট চুরি = গণতন্ত্রের হত্যা” এবং “এসআইআর – লোকতন্ত্র পর বার”।
কেসি ভেনুগোপালের এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কংগ্রেসের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, “নরেন্দ্র মোদী সরকার গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করছে। সাংসদদের নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।” তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সাগরিকা ঘোষ এক্স-এ লিখেছেন, “গণতন্ত্রের এই দিনে সাংসদদের আটকানো হচ্ছে।এটি সরকারের ভয়ের প্রকাশ।”
দিল্লি-কে নিরাপদ করতে পথ কুকুর ধরার সুপ্রিম নির্দেশ, বাধা দিলেই কঠোর ব্যবস্থা
কেসি ভেনুগোপালের “দেশে গণতন্ত্র অবশিষ্ট নেই” মন্তব্য ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। দিল্লি পুলিশের বাধা এবং সাংসদদের আটকের ঘটনা বিরোধী দলগুলির ক্ষোভকে আরও তীব্র করেছে। এই ঘটনা ভারতের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।