মিলন পণ্ডা, কাঁথি: স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিযুগের বিপ্লবী শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদান দিবস (Khudiram Bose Martyrdom Day) ঘিরে কাঁথিতে দেখা গেল তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক দড়ি-টানাটানি। ১১ আগস্ট, ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদান দিবস উপলক্ষে কাঁথির কিশোরনগর স্কুলের সামনে তাঁর মূর্তিতে মাল্যদান কর্মসূচি আয়োজন করে দুই দলের কর্মী-নেতৃত্বই। কে আগে শ্রদ্ধা জানাবে, তা নিয়ে কার্যত পরোক্ষ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে— “ক্ষুদিরাম, তুমি কার?”
সকালে প্রথমে মাল্যদান কর্মসূচি ছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির। যদিও শারীরিক অসুস্থতার কারণে শুভেন্দু অধিকারী এদিন উপস্থিত হতে পারেননি। তাঁর পরিবর্তে কাঁথি সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল, দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক অরূপ কুমার দাস, কাঁথি কলেজের অধ্যাপক তথা বিজেপি নেতা চন্দন কুমার মণ্ডল, অসীম মিশ্র প্রমুখ নেতৃত্ব ও কর্মী-সমর্থকেরা মাল্যদান করেন। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, প্রতি বছরই তারা এই দিবস পালন করে আসছেন এবং এটি নিয়মিত দলীয় কর্মসূচি।
বিজেপির কর্মসূচি শেষে একই স্থানে হাজির হন কাঁথি পুরসভার পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি, খোকন চক্রবর্তী, শেখ হারেশ সহ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব ও কর্মী-সমর্থকেরা। তারা ক্ষুদিরাম মূর্তিতে মাল্যদান করেন এবং শহীদকে শ্রদ্ধা জানান। এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতৃত্ব কটাক্ষ করে বলেন, তৃণমূলের “শুভ বুদ্ধি উদয়” হয়েছে এবার। চন্দ্রশেখর মণ্ডলের বক্তব্য— “এত বছর পর তৃণমূল এই দিবস পালন করছে, সেটি ভালো। তবে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা মহান বিপ্লবীকে শ্রদ্ধা জানাতে এগিয়েছে, এজন্য ধন্যবাদ।”
অন্যদিকে, তৃণমূল পক্ষও বিজেপিকে একহাত নেয়। পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি বলেন— “ভারতের স্বাধীনতার সময় বিজেপি নামের কোনও রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বই ছিল না। যারা আজ ক্ষুদিরামকে নিয়ে রাজনীতি করছে, তারা আসলে ধাপ্পাবাজি আর মিথ্যাচারকে পুঁজি করে চলে। ক্ষুদিরাম ছিলেন যুবসমাজের অনুপ্রেরণা। ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ে কীভাবে জীবন বাজি রাখতে হয়, তিনি তা দেখিয়েছেন।” তিনি আরও জানান, “এই মূর্তিটি তৎকালীন তৃণমূল সরকারের আমলেই স্থাপিত হয়েছিল। আমি এখানে দলীয় রাজনীতি করতে আসিনি, কাঁথি পুরসভার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতেই এসেছি।”
ঘটনাটি রাজনৈতিক মহলে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে। স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান বিপ্লবীদের স্মরণ দিবসও যখন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিতর্কিত হয়ে ওঠে, তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে— এ ধরনের শ্রদ্ধা নিবেদন কি সত্যিই দেশপ্রেম, নাকি রাজনৈতিক পুঁজির অংশ? কাঁথির এই ঘটনায় স্পষ্ট, শহীদ ক্ষুদিরাম বসুকে কেন্দ্র করেও আজকের রাজনীতি রং বদলাচ্ছে।
ক্ষুদিরাম বসু, যিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কার্যকলাপের জন্য ফাঁসির মঞ্চে হাসিমুখে দাঁড়িয়েছিলেন, আজও বাঙালির হৃদয়ে এক অদম্য সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক। কিন্তু তাঁর নাম ও ত্যাগকে ঘিরে রাজনৈতিক দলে দলে প্রতিযোগিতা নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে সমাজকে।