ভারতে সুরাপ্রেমীর হার জানলে অবাক হবেন

আজকের দিনে আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ জীবনযাপনের মধ্যে মদ্যপান (Alcohol Consumption) একটি বিস্তৃত বিষয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু ভারতের মতো বৈচিত্র্যময় দেশে এই সংস্কৃতি এবং অভ্যাস নিয়ে…

drinking-in-balurghat-college-union-room-bjp-shares-video

আজকের দিনে আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ জীবনযাপনের মধ্যে মদ্যপান (Alcohol Consumption) একটি বিস্তৃত বিষয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু ভারতের মতো বৈচিত্র্যময় দেশে এই সংস্কৃতি এবং অভ্যাস নিয়ে কতটা বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, তা জানলে অনেকেই অবাক হতে পারেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর গ্লোবাল হেলথ অবজারভেটরি ২০২৫-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ৬২.২% জনগোষ্ঠী এখনো মদ্যপান করেননি। এই হার বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই হার মাত্র ১১.৪% এবং অস্ট্রেলিয়ায় ৮.৭২%। এই তথ্যটি ভারতের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রভাবকে প্রতিফলিত করে, যা মদ্যপানকে প্রায়ই নেতিবাচকভাবে দেখে।

   

সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রভাব

ভারত একটি এমন দেশ, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম এবং সম্প্রদায় একত্রে বসবাস করে। হিন্দু ধর্মে মদ্যপানকে প্রায়ই পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যদিও কিছু ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক উৎসে এর ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্রাহ্মণ বর্ণের জন্য বিশেষ করে মদ্যপান নিষিদ্ধ ছিল, কারণ তাদের বেদজ্ঞান এবং সোম রীতির সঙ্গে এর মিলন অশুদ্ধ হতে পারত। অন্যদিকে, ইসলাম ধর্মে মদ্যপান নিষিদ্ধ এবং এই ধর্মের অনুসারীদের বড় অংশ ভারতে বসবাস করে, যা এই হার বাড়াতে সাহায্য করেছে। জৈন ও শিখ ধর্মেও মদ্যপানের প্রতি নিরস্ত্রিতা দেখা যায়, যা সামগ্রিকভাবে দেশের মদ্যপানহীন জনগোষ্ঠী বৃদ্ধি পেয়েছে।

আঞ্চলিক বিভিন্নতা

তবে এই তথ্যের পেছনে সারা ভারতের একঘেয়ে ছবি নয়। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য জরিপ-৫ (NFHS-5, ২০১৮-২১) অনুযায়ী, গ্রামীণ ভারতের তুলনায় শহরে মদ্যপানের হার কিছুটা কম। পুরুষদের মধ্যে ১৯.৯% গ্রামে এবং ১৬.৫% শহরে মদ্যপান করেন, যেখানে নারীদের মধ্যে এই হার क्रমশ ১.৬% এবং ০.৬%। আবার উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো, যেমন অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর ও মেঘালয়ে মদ্যপানের হার উচ্চতর। অরুণাচল প্রদেশে পুরুষদের ৫৩% এবং নারীদের ২৪% মদ্যপান করেন, যা দেশের গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। এই এলাকায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে মদ্যপান সাংস্কৃতিক অভ্যাস হিসেবে গৃহীত, যা এই পার্থক্যের কারণ হতে পারে।

বাড়ছে মদ্যপানের প্রবণতা

যদিও মদ্যপান না করা জনগোষ্ঠীর হার বেশি হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মদ্যপানের প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। মানি কন্ট্রোলের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০১৯ সালের একটি সরকারি জরিপ অনুযায়ী, ১০-৭৫ বছর বয়সী ৭ জনের মধ্যে ১ জন মদ্যপান করে। দ্রুত নগরায়ণ, আয়ের বৃদ্ধি এবং জীবনযাপনের পরিবর্তিত মানসিকতা এই বৃদ্ধির মূল কারণ। ২০১৬ সালে প্রতি ব্যক্তির মদ্যপানের হার ৫.৭ লিটার ছিল, যা ২০১০ সালে ৪.৩ লিটার এবং ২০০৫ সালে ২.৪ লিটার ছিল। এটি দেখায় যে, যদিও বড় অংশ জনগোষ্ঠী এখনো মদ্যপান থেকে দূরে রয়েছে, তবুও মদ্যপানকারীদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

Advertisements

সামাজিক ও স্বাস্থ্যের প্রভাব

মদ্যপানের বৃদ্ধি স্বাস্থ্য এবং সমাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। WHO-এর গ্লোবাল মনিটরিং সিস্টেম অনুযায়ী, মদ্যপানজনিত সমস্যা সারা বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। ভারতে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এই অভ্যাস সামাজিক সমস্যা তৈরি করছে, যেমন পরিবারে দ্বন্দ্ব এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট। তবে শহরগুলোতে মদ্যপান বিলাসিতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে উঠেছে, যা বিশেষ করে মুম্বই, দিল্লি ও বেঙ্গালুরুর মতো মেট্রো শহরে লক্ষণীয়।

ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি

ভারতের মতো দেশে মদ্যপানের হার এবং এর প্রভাব নিয়ে ভবিষ্যৎ নির্ণয়ে সরকারি নীতি ও সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ৬২.২% জনগোষ্ঠী এখনো মদ্যপান থেকে দূরে থাকুক, তবুও বাড়তে থাকা মদ্যপানের প্রবণতা এই সংখ্যাকে কমাতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা, সচেতনতা প্রচার এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব।

সুতরাং, ভারতের মদ্যপান নিয়ে এই বিস্ময়কর তথ্য আমাদের এই বৈচিত্র্যময় দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গতিশীলতার দিকে ইঙ্গিত করে। ৬২.২% মদ্যপানহীন জনগোষ্ঠী একদিকে গর্বের বিষয়, অন্যদিকে বাড়তে থাকা মদ্যপানের প্রবণতা চিন্তার কারণ। এই দ্বন্দ্বের মধ্যে ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সচেতনতা ও সঠিক নীতি গ্রহণ অপরিহার্য।