ভারত এবং পাকিস্তানের নৌবাহিনী (Arabian Sea) আগামী ১১ ও ১২ আগস্ট আরব সাগরে পৃথক নৌমহড়া পরিচালনা করতে চলেছে, যা মাত্র ৬০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে অনুষ্ঠিত হবে। ভারতীয় নৌবাহিনী গুজরাটের পোরবন্দর, দ্বারকা, ওখা এবং দিউ উপকূলের কাছে মহড়া চালাবে, যেখানে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইলসহ বিভিন্ন অস্ত্রের পরীক্ষা করা হবে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান নৌবাহিনীও তাদের জলসীমায় নোটিশ টু এয়ারমেন অ্যান্ড মেরিনার্স (নোটাম) জারি করে সমান্তরাল মহড়ার ঘোষণা করেছে। প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, এই মহড়াগুলি সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
এই নৌমহড়া দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা গত এপ্রিলে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর আরও তীব্র হয়েছে। ভারত এই হামলার জন্য জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈবার মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সীমান্তের ওপারের যোগসূত্রের অভিযোগ তুলেছে।
ভারতীয় নৌবাহিনী গুজরাট উপকূলের কাছে চারটি ‘গ্রিন নোটিফিকেশন’ জারি করেছে, যা জানিয়েছে যে এই এলাকায় নৌ-ফায়ারিং মহড়া চলবে। এই মহড়ায় অংশ নেবে ভারতের অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ, যার মধ্যে রয়েছে ব্রহ্মোস মিসাইল এবং মাঝারি পাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল (এমআরএসএএম)।
এই মহড়ার উদ্দেশ্য হলো নৌবাহিনীর দীর্ঘ-পাল্লার নির্ভুল আঘাতের ক্ষমতা এবং প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতি যাচাই করা। ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্র এক্স-এ পোস্ট করে জানিয়েছেন, “ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলি সমুদ্রে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সদা প্রস্তুত।”
অন্যদিকে, পাকিস্তান নৌবাহিনীও আরব সাগরে তীব্র মহড়া এবং লাইভ ফায়ারিং পরিচালনা করছে। তারা গত সপ্তাহে চারটি নৌ-মিসাইল ফায়ারিং নোটিফিকেশন জারি করলেও পূর্বের তিনটি ক্ষেত্রে কোনও মিসাইল উৎক্ষেপণ করেনি।
ভারতীয় নৌবাহিনী পাকিস্তানের কার্যকলাপের উপর কড়া নজর রাখছে। প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানের চীনের সমর্থনে নৌশক্তি বৃদ্ধি, যেমন চারটি টাইপ ০৫৪এ/পি ফ্রিগেট এবং আটটি ইউয়ান-শ্রেণির ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিনের অন্তর্ভুক্তি, ভারতের জন্য ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
এই মহড়া দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ঘটছে, যা পাহালগাম হামলার পর থেকে আরও তীব্র হয়েছে। ভারত পহেলগাঁও হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত, পাঞ্জাবের আটারি সীমান্ত বন্ধ এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাসের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
পাকিস্তান এর জবাবে ভারতীয় বিমানের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ এবং সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করেছে। পাকিস্তান আরও জানিয়েছে, জলপ্রবাহ বন্ধ করা হলে তা ‘যুদ্ধের কাজ’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ভারতের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে ত্রিপাঠী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সমুদ্র নিরাপত্তার পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফ করেছেন। ভারতীয় নৌবাহিনী এবং ভারতীয় বিমান বাহিনী উভয়ই উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে, এবং গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে জরুরি অবতরণের ক্ষমতা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
Honda-র প্রথম হাই-পারফরম্যান্স ই-বাইক আসছে, টিজারে ঝলক দেখাল সংস্থা
এই মহড়া ভারতের সমুদ্র শক্তি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তায় নেতৃত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করছে। আগামী দিনে এই মহড়ার ফলাফল এবং দুই দেশের সম্পর্কের দিকে সবার নজর থাকবে।