ভারতীয় নৌবাহিনীর নতুনতম স্টিলথ ফ্রিগেট আইএনএস তমাল ( INS Tamal) তার ভারতে ফিরতি যাত্রার অংশ হিসেবে মরক্কোর কাসাবিয়াঙ্কা বন্দরে ৬ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর শেষ করেছে। গত ১ জুলাই রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদে ইয়ান্তার শিপইয়ার্ডে কমিশন করা এই অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজটি বর্তমানে ইউরোপ এবং এশিয়ার একাধিক বন্দর হয়ে তার হোম বেস কর্ণাটকের কারওয়ারে ফিরছে।
এই সফর ভারতের নৌ কূটনীতি এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত দুই বছরে কাসাবিয়াঙ্কায় পৌঁছানো এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর তৃতীয় জাহাজ।আইএনএস তমল তালওয়ার-শ্রেণির অষ্টম ফ্রিগেট এবং তুষিল-শ্রেণির দ্বিতীয় জাহাজ।
এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর শেষ বিদেশে নির্মিত যুদ্ধজাহাজ, যা ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের দিকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপের প্রতীক। ১২৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং প্রায় ৩,৯০০ টন ওজনের এই ফ্রিগেটটি উন্নত প্রযুক্তি এবং অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। এতে রয়েছে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল, স্টিল-১ সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল, ১০০ মিমি নৌকা কামান, টর্পেডো, এবং অ্যান্টি-সাবমেরিন রকেট লঞ্চার।
এছাড়া, হুমসা-এনজি সোনার এবং অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম এই জাহাজটিকে বহুমুখী যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত করে তুলেছে। জাহাজটির গতি ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটারের বেশি এবং এটি প্রায় ৯,০০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম।
কাসাবিয়াঙ্কায় সফরের সময় ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিনিধি সঞ্জয় রানা জাহাজটি পরিদর্শন করেন। জাহাজের কমান্ডিং অফিসার ক্যাপ্টেন শ্রীধর তাতা তাঁকে জাহাজের গঠন, ক্ষমতা এবং সমুদ্র নিরাপত্তায় এর ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।
এই সফরে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং মরক্কোর রয়্যাল নেভির মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ এবং জাহাজের ডেকে যোগ সেশনের আয়োজন করা হয়, যা দুই দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হয়েছে।
এই কার্যক্রম ভারতের ‘সাগর’ (সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন) নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ভারত মহাসাগর এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও সহযোগিতা প্রচারের উপর জোর দেয়।
আইএনএস তমাল এই বন্দর সফর ভারত-মরক্কো সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব তুলে ধরেছে। গত দুই বছরে ভারতীয় নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ কাসাবিয়াঙ্কায় সফর করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে নৌ সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার ইঙ্গিত দেয়। এই সফরের মাধ্যমে ভারত তার নৌ শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমুদ্র নিরাপত্তায় নেতৃত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
জাহাজটি তার ফিরতি যাত্রায় আরও কয়েকটি ইউরোপীয় এবং এশীয় বন্দরে থামবে, যা ভারতের নৌ কূটনীতির বিস্তৃতি প্রদর্শন করবে।আইএনএস তমাল ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ২৬% স্বদেশী উপাদান, যেমন ব্রহ্মোস মিসাইল এবং হুমসা-এনজি সোনার, এই জাহাজে একীভূত করা হয়েছে।
এটি ভারতের নৌবাহিনীকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন এবং পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান নৌ শক্তির মোকাবিলায় শক্তিশালী করে তুলেছে। জাহাজটির কমান্ডার ক্যাপ্টেন শ্রীধর তাতা, যিনি অপারেশন বিজয় এবং পারাক্রমে অংশ নিয়েছেন, জাহাজটিকে একটি ‘চলমান দুর্গ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।এই সফর ভারতের নৌবাহিনীর ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার ভূমিকার প্রতিফলন।
অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে রাখতে হবে ৫০ হাজার! নয়া ঘোষণা ব্যাঙ্কের
ভারতীয় নৌবাহিনী বর্তমানে ১৩০টিরও বেশি জাহাজ পরিচালনা করে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে এটিকে ২০০-এর বেশি জাহাজে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। আইএনএস তমলের মতো জাহাজগুলি ভারতের সমুদ্র সীমানা সুরক্ষিত করতে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।