লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগের জবাবে বিজেপি সাংসদ (BJP MP) জগদীশ শেট্টার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “যখনই কংগ্রেস জয়ী হয়, তারা তা ন্যায়বিচার বলে দাবি করে, কিন্তু যখনই তারা নির্বাচনে হারে, তখনই ইভিএম-এ ত্রুটি এবং ভুয়ো ভোটের অভিযোগ তোলে।
তারা কাগজের বান্ডিল দেখিয়েছে। সেই নথিগুলি নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়ে চ্যালেঞ্জ করুক। তারা কেন চ্যালেঞ্জ করছে না? রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনের কাছে হলফনামা দিতে প্রস্তুত নন, কারণ তিনি জানেন তার অভিযোগ মিথ্যা। যদি তিনি মিথ্যা হলফনামা দেন, তবে তা ফৌজদারি কার্যবিধির অধীনে অপরাধ হবে।”
রাহুল গান্ধী সম্প্রতি একটি সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট চুরির গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় এক লক্ষ ভুয়ো ভোট সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে নির্বাচনী কারচুপি হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
রাহুল দাবি করেন, তাঁর কাছে নির্বাচন কমিশনের তথ্যের ভিত্তিতে প্রমাণ রয়েছে, যেখানে ভুয়ো ঠিকানা, একাধিক ভোটার নিবন্ধন এবং অন্যান্য অনিয়মের উদাহরণ রয়েছে। তিনি এই কারচুপিকে ‘সংবিধান এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
জগদীশ শেট্টার এই অভিযোগকে ‘নাটক’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “রাহুল গান্ধী অযথা সমস্যা সৃষ্টি করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছেন। তিনি যদি এতটাই নিশ্চিত হন, তবে কেন তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের করছেন না বা আদালতে চ্যালেঞ্জ করছেন না?” তিনি আরও বলেন, “রাহুল গান্ধী একগুচ্ছ কাগজ দেখিয়েছেন, কিন্তু সেগুলো কেন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হয়নি?”
নির্বাচন কমিশনও রাহুল গান্ধীর অভিযোগের জবাবে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তারা বলেছে, রাহুল যদি তাঁর অভিযোগের উপর আস্থা রাখেন, তবে তাঁকে নির্বাচনী নিবন্ধন নিয়ম, ১৯৬০-এর ২০(৩)(বি) ধারা অনুযায়ী হলফনামায় স্বাক্ষর করে প্রমাণ জমা দিতে হবে। কমিশন বলেছে, “যদি রাহুল গান্ধী তাঁর কথায় বিশ্বাস না করেন, তবে তাঁর উচিত অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে জনগণকে বিভ্রান্ত করা বন্ধ করা।”
বিজেপির আরও কয়েকজন নেতা, যেমন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব, রাহুলের অভিযোগকে ‘মিথ্যার কারখানা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যাদব বলেন, “রাহুল গান্ধী মহারাষ্ট্রে এক কোটি ভোটার বৃদ্ধির কথা বলেছেন, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সেখানে মাত্র ৪০ লক্ষ ভোটার বেড়েছে। এটা তাঁর দাবির তুলনায় ৬০ শতাংশ কম।” তিনি রাহুলের ভাষাকে ‘হুমকিমূলক’ বলেও সমালোচনা করেছেন।
কংগ্রেস এবং শিবসেনা (ইউবিটি)-এর নেতারা রাহুলের অভিযোগের সমর্থনে সরব হয়েছেন। তারা দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত তাদের নিজস্ব তথ্য প্রকাশ করে এই অভিযোগের জবাব দেওয়া। কর্ণাটকের মন্ত্রী এইচ.কে. পাতিল দাবি করেছেন, মহাদেবপুরায় এক লক্ষেরও বেশি ভোট চুরি হয়েছে।
এই বিতর্ক ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। রাহুল গান্ধী বলেছেন, “আমি সবকিছু প্রকাশ্যে বলেছি এবং নির্বাচন কমিশনের তথ্যের উপর ভিত্তি করেই আমার অভিযোগ।” তিনি কমিশনের কাছে গত ১০-১৫ বছরের ভোটার তালিকা এবং সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।
নকআউটে পৌঁছেও নিয়মরক্ষার লড়াইয়ে বায়ু সেনার থেকে সতর্ক অস্কার
এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিজেপি নেতারা রাহুলের অভিযোগকে ‘হতাশার প্রকাশ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যখন কংগ্রেস দাবি করছে, এটি গণতন্ত্রের ভিত্তির উপর আঘাত। আগামী দিনে নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়ে সবার নজর থাকবে।