বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu) মুর্শিদাবাদের লালগোলা ব্লকে বুথ লেভেল অফিসার (BLO) নিয়োগে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যে বিএলও নিয়োগে স্থায়ী সরকারি কর্মীদের, বিশেষ করে শিক্ষকদের, অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
কিন্তু মুর্শিদাবাদের লালগোলা ব্লক সহ বিভিন্ন ব্লকে ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (বিডিও) এই নিয়ম উপেক্ষা করে প্যারা শিক্ষক, কন্ট্রাকচুয়াল শিক্ষক এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বিএলও হিসেবে নিয়োগ করেছেন। শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনাকে তৃণমূল কংগ্রেস এবং আই-প্যাকের কারচুপি হিসেবে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, বিএলও নিয়োগে স্থায়ী সরকারি কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া বাধ্যতামূলক। যদি কোনও বুথে বা সংলগ্ন এলাকায় স্থায়ী কর্মী বা শিক্ষক না থাকেন, তবেই অস্থায়ী বা কন্ট্রাকচুয়াল কর্মীদের নিয়োগ করা যেতে পারে। তবে, এই ক্ষেত্রেও নিয়োগের আগে যাচাই করতে হবে যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা আনুগত্য নেই।
যদি কোনও ব্যক্তি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তবে তিনি বিএলও পদে নিয়োগের অযোগ্য। শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন, মুর্শিদাবাদের লালগোলা ব্লকে এই নির্দেশ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “লালগোলা ব্লকে বিএলও হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, প্রায় সবাই কন্ট্রাকচুয়াল বা চুক্তিভিত্তিক কর্মী।
এই ব্লকে কি একজনও স্থায়ী সরকারি কর্মী বা শিক্ষক নেই?”শুভেন্দু আরও দাবি করেছেন যে, লালগোলা ব্লকের বিএলও নিয়োগের তালিকা বিডিও নিজে তৈরি করেননি, বরং তৃণমূল কংগ্রেস এবং আই-প্যাক এই তালিকা তৈরি করে দিয়েছে। তিনি বলেন, “এটি তৃণমূল কংগ্রেসের কারচুপির একটি স্পষ্ট উদাহরণ।
নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ কঠোরভাবে পালন করা উচিত।” তিনি লালগোলা ব্লকের সচেতন নাগরিক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের এই তালিকা যাচাই করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি কোনও বুথে স্থায়ী সরকারি কর্মী বা শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও প্যারা শিক্ষক, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বা কন্ট্রাকচুয়াল কর্মীকে বিএলও নিয়োগ করা হয়ে থাকে, তবে সেই তথ্য আমাকে ইমেল করুন।
বিরোধী দলনেতা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসের এই কথিত কারচুপি আটকাতে তৃণমূল বাদে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদেরও তথ্য প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি এই তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাব এবং নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিডিওর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করাব।” তিনি এই ঘটনাকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার উপর আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে এই বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এই অভিযোগ রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস এখনও এই অভিযোগের জবাব দেয়নি, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ লঙ্ঘনের এই অভিযোগ যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতার উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলবে।
বারাণসীর মন্দিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, প্রধান পুরোহিত সহ আহত বহু
লালগোলা ব্লকের নাগরিকরা এই বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন। স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, “যদি সত্যিই নিয়ম লঙ্ঘন করে বিএলও নিয়োগ করা হয়ে থাকে, তবে এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর আঘাত। আমরা এই তালিকা যাচাই করব এবং প্রয়োজনে তথ্য প্রকাশ করব।” আগামী দিনে এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কী পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়ে সবার নজর থাকবে।