শনিবার রাতের নীরবতা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল বারাণসীর এক প্রাচীন মন্দিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়। আরতি চলাকালীন আচমকা আগুন লাগায় মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ভক্ত ও স্থানীয়দের মধ্যে। এই অগ্নিকাণ্ডে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন মন্দিরের প্রধান পুরোহিত-সহ মোট সাতজন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশু রয়েছে, যাদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা বেশ গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার গভীর রাতে, যখন মন্দিরে আরতি চলছিল এবং ভক্তরা প্রার্থনায় মগ্ন ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রথমে মন্দিরের প্রধান গর্ভগৃহের পাশে একটি বিদ্যুতের সংযোগস্থল থেকে স্ফুলিঙ্গ বের হতে দেখা যায়। মুহূর্তের মধ্যে সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। মন্দিরে রাখা তুলোর বাতি, তেল ও ধূপকাঠির মজুত থাকায় আগুন দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মন্দিরের ভেতর ধোঁয়ায় ভরে যায়, আর ভক্তরা প্রাণ বাঁচাতে বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেন।
তবে প্রধান পুরোহিতসহ কয়েকজন ভক্ত ভেতরে আটকে পড়েন। আগুনের লেলিহান শিখা ও ঘন ধোঁয়ার কারণে উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে এসে দ্রুত বালতি ও পাইপের সাহায্যে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। প্রাথমিকভাবে স্থানীয়রাই আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দমকল বাহিনী ও স্থানীয় থানার পুলিশ। দমকলকর্মীরা প্রায় আধঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হন।
আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় কবীর চৌরাহা বিভাগীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর, অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আহতদের মধ্যে একজনের শরীরের প্রায় ৬৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে এবং তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকরা তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে পর্যবেক্ষণ করছেন।
প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকেই এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। তবে দমকল বিভাগ ও পুলিশ যৌথভাবে ঘটনার সঠিক কারণ খতিয়ে দেখছে। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আরতির সময় মন্দিরের আলোকসজ্জা ও বিদ্যুতের ব্যবস্থার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কীভাবে এই বিপত্তি ঘটল তা এখনও পরিষ্কার নয়।
এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বহু ভক্ত ও স্থানীয়রা হাসপাতালে ভিড় জমিয়েছেন আহতদের খোঁজখবর নিতে। মন্দির কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, আহতদের চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করবে কমিটি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় প্রশাসনও বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকরা। তাঁরা মন্দিরের বিদ্যুৎ সংযোগ, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং জরুরি প্রস্থানপথের অবস্থান খতিয়ে দেখছেন।
বারাণসীর এই মন্দিরটি বহু বছরের পুরোনো এবং প্রতিদিন শত শত ভক্ত এখানে দর্শনে আসেন। অগ্নিকাণ্ডের পর মন্দির আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে, তবে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সংস্কার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির পরই মন্দির পুনরায় দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
স্থানীয়দের একাংশের মতে, যদি মন্দিরে যথাযথ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা আগে থেকেই থাকত, তবে এই দুর্ঘটনা এতটা ভয়াবহ রূপ নিত না। তাঁদের দাবি, শুধু এই মন্দির নয়, এলাকার অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনাতেও আধুনিক অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হোক।
এই দুর্ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল, ভিড়পূর্ণ জনসমাগমস্থলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা ও অগ্নি নিরাপত্তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শনিবার রাতের সেই ভয়ঙ্কর মুহূর্ত হয়তো বহু মানুষের মনে দীর্ঘদিন রয়ে যাবে আতঙ্কের স্মৃতি হয়ে। আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য এলাকাবাসী ও ভক্তরা প্রার্থনা করছেন, আর প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে— ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।