জম্মু ও কাশ্মীরের কিশতওয়ার (Kishtwar) জেলার ডাল এলাকায় রবিবার ভোরে নিরাপত্তা বাহিনী এবং জঙ্গিদের মধ্যে তুমুল গোলাগুলি শুরু হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর হোয়াইট নাইট কর্পসের তথ্য অনুযায়ী, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি অভিযানে সেনাবাহিনী জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই অভিযানে দুই থেকে তিনজন জঙ্গি আটকা পড়েছে বলে প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে। অভিযানটি এখনও চলছে, এবং এলাকাটি নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাওয়ের মধ্যে রয়েছে।
হোয়াইট নাইট কর্পস এক্স পোস্টে জানিয়েছে, “১০ আগস্ট ২০২৫ ভোরে কিশতওয়ারের ডাল এলাকায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সতর্ক সৈন্যরা জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। গোলাগুলি হয়েছে।
অভিযান চলছে।” এই ঘটনাটি কুলগাম জেলায় চলতে থাকা ‘অপারেশন আখাল’-এর একদিন পরে ঘটল, যেখানে শনিবার দুই সেনা সদস্য, ল্যান্স নায়েক প্রীতপাল সিং এবং সেপয় হরমিন্দর সিং, কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন।
কিশতওয়ারের পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গিদের উপস্থিতি সম্পর্কে নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান শুরু হয়। নিরাপত্তা বাহিনী যখন অনুসন্ধান শুরু করে, তখন লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা গুলি চালায়, যার ফলে তাৎক্ষণিক পাল্টা জবাব দেওয়া হয় এবং গোলাগুলি শুরু হয়। সূত্র অনুযায়ী, এই অভিযানে দুই থেকে তিনজন পাকিস্তানি জঙ্গি জড়িত থাকতে পারে, যারা ডাল এলাকার ঘন জঙ্গলে আত্মগোপন করে আছে।
এই ঘটনা জম্মু ও কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতার অংশ। গত দুই সপ্তাহে এই অঞ্চলে চারটি বড় অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে ‘অপারেশন মহাদেব’ উল্লেখযোগ্য, যেখানে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় জড়িত লস্কর-ই-তইবার তিনজন পাকিস্তানি জঙ্গিকে দাচিগামের লিডওয়াস জঙ্গলে নিশ্চিহ্ন করা হয়। এছাড়া, ‘অপারেশন শিব শক্তি’-তে পুঞ্চ সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখা দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারী দুই জঙ্গি নিহত হয়।
কুলগামে চলমান ‘অপারেশন আখাল’ এই অঞ্চলের দীর্ঘতম সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানগুলির একটি। এই অভিযান ১ আগস্ট শুরু হয় এবং এখনও পর্যন্ত দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে, তবে আরও দুই থেকে তিনজন ঘন জঙ্গলে আটকা পড়ে আছে।
এই অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনী, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ, সিআরপিএফ এবং স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি) যৌথভাবে কাজ করছে। ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং উন্নত নজরদারি সরঞ্জাম যেমন থার্মাল ইমেজিং ডিভাইস এবং প্যারা স্পেশাল ফোর্সেস ব্যবহার করা হচ্ছে।
কিশতওয়ারের এই সংঘর্ষ এমন এক সময়ে ঘটছে যখন জম্মু ও কাশ্মীরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক নিহত হওয়ার পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনী আরও তৎপর হয়েছে। সেই হামলার জবাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয় এবং ১০০ জনের বেশি জঙ্গি নিহত হয়।
নিরাপত্তা বাহিনী এই অঞ্চলে জঙ্গি কার্যকলাপ রোধে ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিশতওয়ারের ডাল এলাকায় চলতে থাকা এই অভিযানে জঙ্গিদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য উচ্চ প্রযুক্তির সরঞ্জাম এবং কৌশলগত দক্ষতা ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ঘটনার আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সতর্কতা এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
হার জিত নয় লড়াই ন্যায় বিচারের! সিঁদুরে প্রতিক্রিয়া সেনা প্রধানের
এই অভিযানগুলি প্রমাণ করে যে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি বজায় রাখতে এবং জঙ্গিদের মোকাবিলায় বাহিনীর এই নিরলস প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।