সাম্প্রতিক সময়ে সোনার দামের (Gold Price) লাগামছাড়া উত্থান সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী—সবার মধ্যেই আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা, ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে বিশ্বজুড়েই সোনার(Gold Price) চাহিদা বেড়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ভারতীয় বাজারেও। বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনার এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আপাতত থামার কোনো লক্ষণ নেই। যতদিন না আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে, ততদিন পর্যন্ত দাম চড়া থাকবেই।
ভারতে সোনা শুধুমাত্র গয়না তৈরির উপকরণ নয়, এটি একটি ঐতিহ্য, সামাজিক মর্যাদা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, একটি নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম। অনিশ্চিত সময়ে যখন শেয়ার বাজার বা অন্যান্য বিনিয়োগ ক্ষেত্র ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন মানুষ সোনার দিকে ঝুঁকে পড়ে। বিশেষ করে বিয়ের মরশুম বা উৎসবের সময় সোনার চাহিদা হঠাৎই বেড়ে যায়, যা দামের বৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ যদি সুদের হার হ্রাস করে অথবা ডলারের মান পতনের সম্ভাবনা তৈরি হয়, তাহলে সোনার দামে সাময়িক পতন ঘটতে পারে। কারণ ডলারের মান কমে গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনা তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়ে যায় এবং অনেক বিনিয়োগকারী মুনাফা তুলে নিতে শুরু করে, যার ফলে দাম কিছুটা নেমে আসে। তবে এই পতন খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না, কারণ মুদ্রাস্ফীতি বা বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মতো মৌলিক কারণগুলো থাকলে সোনা আবারও ঊর্ধ্বমুখী পথে ফিরে যায়।
বর্তমানে ভারতীয় বাজারে সোনার দাম (Gold Price) বৃদ্ধির পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার সরবরাহ তুলনামূলকভাবে সীমিত, অথচ চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, ভারতের মুদ্রা রুপির মান ডলারের তুলনায় কিছুটা দুর্বল হওয়ায় আমদানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে, যা সরাসরি সোনার দামে(Gold Price) প্রতিফলিত হচ্ছে।
এছাড়া ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধ বা বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিমুক্ত সম্পদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, আর সোনা সেই তালিকায় শীর্ষে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য চড়ছে এবং সেই প্রভাব এসে পড়ছে দেশীয় বাজারে।
বিনিয়োগকারীদের কাছে সোনা এখনও নিরাপদ ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের প্রতীক। কিন্তু সাধারণ ক্রেতাদের জন্য এই ক্রমবর্ধমান দাম বড় সমস্যা তৈরি করছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যারা বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য সোনা কিনতে চান, তাদের পক্ষে এই দামে সোনা কেনা বেশ কষ্টকর হয়ে উঠছে। অনেকেই বিকল্প হিসেবে রুপো বা হালকা গয়নায় ঝুঁকছেন, আবার কেউ কেউ অগ্রিম বুকিং বা ইএমআই পদ্ধতিতে সোনা কেনার পরিকল্পনা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সোনা কিনতে চান, তাদের জন্য এখনই সম্পূর্ণ বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। বরং ধাপে ধাপে কেনার কৌশল অবলম্বন করা উচিত। কারণ দাম সাময়িকভাবে কিছুটা নামলেও, দীর্ঘমেয়াদে সোনার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সব মিলিয়ে, সোনার বাজার(Gold Price) এখন অস্থির এবং ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি, ডলারের মান, সুদের হার এবং ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ—সব মিলিয়ে আগামী কয়েক মাস সোনার দামে নাটকীয় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে যতদিন পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থিতিশীল না হয়, ততদিন সোনার দাম উচ্চস্তরে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। এই পরিস্থিতিতে ক্রেতা ও বিনিয়োগকারী—উভয়েরই সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।