২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলির প্রস্তুতি এখন থেকেই তুঙ্গে। রাজ্যে প্রতি ভোটের আগে যেমন উত্তেজনা ছড়ায়, এবারে তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এবার বিজেপি (BJP) কলকাতা শহরে ভোট কৌশলে এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। ‘হাই–রাইজ় কমিটি’ গঠন করে শহরের বহুতল আবাসনের ভোটারদের বুথমুখী করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
বিজেপি(BJP) সূত্রে খবর, সম্প্রতি তারা কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে রাজ্যে সমীক্ষা করিয়েছে। সেই সমীক্ষায় উঠে এসেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—কলকাতার উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের এক বড় অংশের মধ্যে তৃণমূল বিরোধী মনোভাব প্রবল হলেও ভোটের দিন তাদের অনেককেই বুথে দেখা যায় না। অর্থাৎ রাজনৈতিক মতামত থাকা সত্ত্বেও ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে অনীহা লক্ষ্য করা যায়। এই সমস্যার সমাধান খুঁজতেই বিজেপি এবার সরাসরি বহুতল আবাসনের বাসিন্দাদের টার্গেট করছে।
এই ‘হাই–রাইজ় কমিটি’ মডেল বিজেপির (BJP) কাছে নতুন নয়। মুম্বইয়ে এর আগে এই ধরনের কমিটি সফলভাবে কাজ করেছে। সেখানকার আর্থ–সামাজিক অবস্থা ও জনবিন্যাস বিবেচনা করে ভোটারদের শ্রেণি–চরিত্র অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করেছিল বিজেপি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার কলকাতায়ও একই কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত কমিটির সদস্য কারা হবেন তা নির্ধারিত হয়নি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রের খবর, যেসব নেতাদের শহরের পরিচিত বহুতল আবাসনে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে এবং যাদের প্রভাব রয়েছে, তাদেরই এই কমিটিতে রাখা হবে।
বঙ্গ–বিজেপির (BJP) এক শীর্ষনেতা জানিয়েছেন, কলকাতা মহানগর এবং নিউ টাউনের মতো এলাকায় গত এক দশকে বহুতল আবাসনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এখানে বসবাসকারীদের মধ্যে একাংশ রাজনীতিতে তেমন আগ্রহী নন। তবে আরেক অংশের মধ্যে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নতুন ভারতের স্বপ্নে আস্থা রয়েছে। এই ভোটারদের মধ্যে তৃণমূল, কংগ্রেস বা বামপন্থী সমর্থক তুলনামূলকভাবে কম। বিজেপি সমীক্ষা থেকে জানতে পেরেছে, এইসব এলাকায় ভোটারদের বেশিরভাগই হয় নিরপেক্ষ নয়তো গেরুয়া শিবিরের প্রতি সহানুভূতিশীল।
সমস্যা হলো, ভোটের দিনে এই জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বুথে পৌঁছায় না। ব্যস্ত জীবনযাত্রা, ভোটের দিনের নানা ব্যক্তিগত পরিকল্পনা কিংবা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আগ্রহহীনতা—সব মিলিয়ে তারা ভোট প্রদানে অনীহা দেখায়। বিজেপি মনে করছে, যদি এই ভোটারদের বুথমুখী করা যায়, তাহলে নির্বাচনী ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
এই কারণেই ‘হাই–রাইজ় কমিটি’র মূল কাজ হবে—বহুতল আবাসনের ভোটারদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সংযোগ বৃদ্ধি, তাদের ভোটদানে উৎসাহিত করা, এবং নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে পৌঁছনোর জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সহায়তা নিশ্চিত করা। এছাড়া সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শহুরে ভোটারদের প্রভাব বাংলার নির্বাচনী রাজনীতিতে ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে কলকাতা ও আশেপাশের অঞ্চলের আসনগুলোতে, যেখানে বহুতল আবাসনের সংখ্যা বেশি, সেখানে নিরপেক্ষ ভোটারদের বুথমুখী করাই হতে পারে গেম–চেঞ্জার। বিজেপি এই দিকটিকেই লক্ষ্য করে এখন থেকেই সংগঠন শক্তিশালী করতে চাইছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, রাজ্যে ভোটের বছর শুরু হওয়ার আগে থেকেই কলকাতার বহুতল আবাসনগুলো রাজনৈতিক লড়াইয়ের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে। বিজেপির এই কৌশল কতটা কার্যকর হবে, তা জানা যাবে ২০২৬-এর ভোট বাক্স খুললেই। তবে এটা স্পষ্ট যে, এবার ভোট যুদ্ধ শুধু মাঠে-ময়দানে নয়, আকাশছোঁয়া ভবনের অন্দরেও জমে উঠবে।