ভারতের U20 মহিলা ফুটবল (India U20 Women ) দল ইয়ং টাইগ্রের্স নামে পরিচিত৷ এএফসি U20 মহিলা এশিয়ান কাপ ২০২৬-এর কোয়ালিফায়ারে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। ২০০৬ সালের পর এই প্রথমবার ভারতের এই তরুণী দলটি প্রধান টুর্নামেন্টে উঠতে পারে, যদি তারা আগামী রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫, মায়ানমারের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে জয়লাভ করে। গ্রুপ ডি-তে ভারত এবং মায়ানমার উভয় দলই সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তবে ভারত তাদের উন্নত গোল পার্থক্যের কারণে টেবিলের শীর্ষে রয়েছে। এই ম্যাচটি নির্ধারণ করবে কে গ্রুপের শীর্ষে থেকে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য প্রধান টুর্নামেন্টে জায়গা করে নেবে, কারণ শুধুমাত্র গ্রুপের প্রথম দলই কোয়ালিফাই করবে।
ম্যাচের গুরুত্ব
এই ম্যাচটি ভারতের জন্য একটি জীবন-মরণের লড়াই। দুই দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এএফসি U20 মহিলা এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেওয়ার এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। ইয়াঙ্গুনের থুওয়ান্না স্টেডিয়ামে মায়ানমারের সমর্থকদের উৎসাহের মুখে ভারতীয় দলকে তাদের সেরাটা দিতে হবে। ভারতের অধিনায়ক শুভাঙ্গী সিং বলেছেন, “সিনিয়র দলের সাফল্য আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমরা জানি এই ম্যাচটি জিততে হবে। আমরা কোনও চাপ অনুভব করছি না, বরং আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।”
ভারতের পারফরম্যান্স
ভারতীয় U20 মহিলা দল গ্রুপ পর্বে এখনও পর্যন্ত মিশ্র ফলাফল দেখিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে তারা গোলশূন্য ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে, যা কিছুটা হতাশার কারণ হয়েছিল। তবে, তুর্কমেনিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে তারা ৭-০ গোলের বিশাল জয় ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করে। এই ম্যাচে সুলঞ্জনা রাউল এবং শুভাঙ্গী সিং দুটি করে গোল করেন, যা দলের আক্রমণাত্মক ক্ষমতার প্রমাণ। তবে, তুর্কমেনিস্তানের দুর্বল প্রতিরক্ষার বিরুদ্ধে এই জয় এসেছে, তাই মায়ানমারের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে ভারতকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
মায়ানমারের শক্তি
স্বাগতিক মায়ানমারও সমান শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তারা তুর্কমেনিস্তানের বিরুদ্ধে ৬-১ গোলের জয় দিয়ে কোয়ালিফায়ার শুরু করে এবং ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে। তাদের আক্রমণভাগ, বিশেষ করে এল থেট ফিও, অসাধারণ ফর্মে রয়েছে। প্রথম ম্যাচে তিনি চারটি গোল করেছেন, যা তাকে টুর্নামেন্টের শীর্ষ গোলদাতার তালিকায় নিয়ে গেছে। তবে, ভারতের শক্তিশালী প্রতিরক্ষার সামনে তাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে, কারণ ভারত এখনও পর্যন্ত মাত্র একটি গোল হজম করেছে। মায়ানমারের জন্য এই ম্যাচটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জয় ছাড়া তাদের কোয়ালিফিকেশনের স্বপ্ন ভেঙে যাবে।
দলের খবর এবং সম্ভাব্য লাইনআপ
দুই দলই তাদের সেরা একাদশ নিয়ে মাঠে নামবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের কোচ জোয়াকিম আলেক্সান্ডারসন সম্ভবত তুর্কমেনিস্তান ম্যাচের একই লাইনআপ ধরে রাখবেন। গোলকিপার মোনালিশা দেবী, অধিনায়ক শুভাঙ্গী সিং, এবং ফরোয়ার্ড সুলঞ্জনা রাউল দলের মূল স্তম্ভ। অন্যদিকে, মায়ানমার তাদের তারকা ফরোয়ার্ড এল থেট ফিও-এর উপর ভরসা রাখবে। কোনও দলেই আঘাতের খবর নেই, তাই দুই দলই তাদের পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামবে।
ভারতের সম্ভাব্য লাইনআপ (৪-২-৩-১):
মোনালিশা দেবী (গোলকিপার), শুভাঙ্গী সিং, সিন্ডি কোলনি, জুহি সিং, সাহেনা টিএইচ, পূজা, নেহা সিল্লে, মনীষা সিংহ, আঞ্জু চানু, সুলঞ্জনা রাউল, সিবানি নংমেইকাপাম।
মায়ানমারের সম্ভাব্য লাইনআপ (৪-২-৩-১):
হ্লা হ্লা হ্থওয়ে (গোলকিপার), মিন মিন নু, ইউ ইউ নাইং, মো, পুইন্ট ফিউ, আয়ে আয়ে সো, নান চো হ্মুয়ে, নাইং নাইং উইন, উইন সান্দার, এল থেট ফিও।
মূল খেলোয়াড়
সুলঞ্জনা রাউল (ভারত U20): তুর্কমেনিস্তানের বিরুদ্ধে দুটি গোল করে সুলঞ্জনা প্রমাণ করেছেন তিনি বড় মঞ্চে পারফর্ম করতে পারেন। তার গতি, সৃজনশীলতা এবং গোল করার ক্ষমতা ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। তিনি এবং সিবানি নংমেইকাপামের জুটি মায়ানমারের প্রতিরক্ষাকে চাপে রাখতে পারে।
এল থেট ফিও (মায়ানমার U20): মায়ানমারের এই তারকা ফরোয়ার্ড টুর্নামেন্টে ইতিমধ্যে চার গোল করেছেন। ভারতের শক্ত প্রতিরক্ষার মধ্য দিয়ে জায়গা খুঁজে নেওয়া তার জন্য চ্যালেঞ্জ হলেও, মায়ানমার সমর্থকরা তাকে নিয়ে আশাবাদী।
ম্যাচের পূর্বাভাস
এই ম্যাচে ভারতের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা এবং মায়ানমারের আক্রমণাত্মক ফুটবলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ভারতের গোল পার্থক্য (+৭) মায়ানমারের (+৫) তুলনায় ভালো, তাই ড্র হলেও ভারত কোয়ালিফাই করতে পারে, যদি ইন্দোনেশিয়া তুর্কমেনিস্তানের বিরুদ্ধে জয় না পায়। তবে, কোচ জোয়াকিম আলেক্সান্ডারসন স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমরা ড্রয়ের জন্য খেলব না। আমাদের লক্ষ্য তিন পয়েন্ট।”
আমাদের পূর্বাভাস: ভারত ২-১ মায়ানমার। ভারতের প্রতিরক্ষা এবং সুলঞ্জনার ফর্ম তাদের জয় এনে দিতে পারে, তবে মায়ানমারের ঘরের মাঠে এটি একটি কঠিন লড়াই হবে।
সম্প্রচারের বিবরণ
ম্যাচটি রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫, ইয়াঙ্গুনের থুওয়ান্না স্টেডিয়ামে বিকেল ৩:০০ টায় (IST) শুরু হবে। এটি পিয়োনে প্লে স্পোর্টস ইউটিউব চ্যানেল এবং এআইএফএফ ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।
এই ম্যাচটি ভারতীয় মহিলা ফুটবলের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হতে পারে। যুব তিগ্রেসরা যদি এই চ্যালেঞ্জ জয় করে, তবে এটি কেবল তাদের কোয়ালিফিকেশন নিশ্চিত করবে না, বরং ভারতীয় ফুটবলে নতুন প্রজন্মের জন্য পথ প্রশস্ত করবে। সমর্থকরা উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করছে এই ম্যাচের জন্য, যা ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার একটি সুযোগ।