বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি নির্যাতনের প্রতিবাদে বাংলা পক্ষের মিছিল

রাখি পূর্ণিমার পুণ্য লগ্নে কলকাতার রাজপথে বাঙালির ঐক্য ও অধিকারের দাবিতে বিরাট মিছিল করল বাংলা পক্ষ (Bangla Pakkho)। সংগঠনের দাবি—ভারতের বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের…

বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি নির্যাতনের প্রতিবাদে বাংলা পক্ষের মিছিল

রাখি পূর্ণিমার পুণ্য লগ্নে কলকাতার রাজপথে বাঙালির ঐক্য ও অধিকারের দাবিতে বিরাট মিছিল করল বাংলা পক্ষ (Bangla Pakkho)। সংগঠনের দাবি—ভারতের বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের উপর যে নিয়মিত নির্যাতন চলছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। কলেজ স্ট্রিট থেকে শুরু হয়ে শ্যামবাজারে বীর সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তির পাদদেশে শেষ হওয়া এই মিছিলে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।

বাংলা পক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোয় হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে টার্গেট করা হচ্ছে। তাঁদের অনেককে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করে অকথ্য অত্যাচার করা হচ্ছে। বাঙালি শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে, মার খেয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে আসছেন, অথচ বাংলার শিল্পাঞ্চল ও শহরাঞ্চলের অধিকাংশ কাজ বহিরাগতদের দখলে রয়েছে।

   

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখি বন্ধন উৎসবের সূচনা করেছিলেন—বাঙালির ঐক্যের প্রতীক হিসেবে। সেই ঐতিহাসিক দিনকেই বেছে নিয়েছে বাংলা পক্ষ, যাতে রবীন্দ্রনাথের দেওয়া ঐক্যের বার্তাকে স্মরণ করে বাঙালিদের মধ্যে প্রতিরোধের মনোভাব জাগিয়ে তোলা যায়।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় মিছিলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, “হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী, বাঙালি বিদ্বেষী বিজেপি আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও নাগরিকত্ব সব কিছু কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু আমরা বাঙালি, মাথা উঁচু করে বাঁচব। আমাদের জাতীয়তাবাদ ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে, আমরা এই ষড়যন্ত্র রুখে দেব।”

তিনি রাজ্য সরকারের কাছে ‘ভূমিপুত্র সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়নের দাবি জানান, যাতে ভিনরাজ্য থেকে ফিরে আসা বেকার বাঙালিদের চাকরি দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, “বাঙালি বেকার ঘরে বসে থাকবে আর বাংলায় কোটি কোটি বহিরাগত চাকরি করবে—এটা চলতে পারে না।”

সাংগঠনিক সম্পাদক কৌশিক মাইতি অভিযোগ করেন, বিজেপি ‘অনুপ্রবেশকারী তাড়ানোর’ নামে আসলে বাঙালি জাতিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, “হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বাঙালিদের উপর আক্রমণের মূল কারণ ধর্ম নয়, মাতৃভাষা। বাবাই সর্দার থেকে বুদ্ধদেব বারিক—অসংখ্য হিন্দু বাঙালি ডিটেনশন ক্যাম্পে অত্যাচারের শিকার হয়েছেন।”

Advertisements

মিছিলে বাংলা পক্ষের শীর্ষ পরিষদের সদস্য অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়, আব্দুল লতিফ, সম্রাট কর, মহ সাহীন, সৌম্য কান্তি ঘোড়ই-সহ বিভিন্ন জেলা সম্পাদক ও নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। কলকাতার ব্যস্ত রাজপথে বাঙালির অধিকারের দাবিতে এই মিছিল ঘিরে মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।

মিছিলে দুটি মূল দাবি তোলা হয়—

বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালির উপর অত্যাচার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

বাংলায় ভূমিপুত্র সংরক্ষণ নীতি চালু করে বাঙালিদের চাকরি নিশ্চিত করতে হবে।

রাখি বন্ধনের দিন বাঙালির ঐক্যের বার্তা নিয়ে বাংলা পক্ষের এই মিছিল যেন এক নতুন আন্দোলনের সূচনা করল। ঐতিহাসিক স্মৃতি, সাংস্কৃতিক পরিচয় ও রাজনৈতিক অধিকারের মিশেলে এদিনের কলকাতার রাজপথ সাক্ষী থাকল বাঙালির গর্জনের।