সোমবার সংসদে পেশ হতে চলেছে নতুন আয়কর বিল

কেন্দ্রীয় সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানিয়েছেন যে, আগামী সোমবার, ১১ আগস্ট, সংসদে পেশ করা হবে নতুন আয়কর বিল (Income Tax bill)। এই বিলটি সিলেক্ট…

Income Tax bill 2025

কেন্দ্রীয় সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানিয়েছেন যে, আগামী সোমবার, ১১ আগস্ট, সংসদে পেশ করা হবে নতুন আয়কর বিল (Income Tax bill)। এই বিলটি সিলেক্ট কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত বিলের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, এবং সরকার কর্তৃক গৃহীত সকল সংশোধনী এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

   

রিজিজু শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, “নতুন আয়কর বিলটি সিলেক্ট কমিটির পরামর্শের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। সরকার সংশোধনীগুলি বিবেচনা করে গ্রহণ করেছে, এবং এই বিল জনগণের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।” এই বিলটি ভারতের কর ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে এবং করদাতাদের জন্য প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নতুন আয়কর বিলের পটভূমি

নতুন আয়কর বিলটি ১৯৬১ সালের আয়কর আইনের পরিবর্তে প্রস্তাবিত হয়েছে, যা দেশের কর ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ, দক্ষ এবং করদাতা-বান্ধব করার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সিলেক্ট কমিটি, যার মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংসদ এবং বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন, এই বিলটি বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করেছে এবং বিভিন্ন সংশোধনী প্রস্তাব করেছে।

সরকার এই সংশোধনীগুলি গ্রহণ করেছে, যা বিলটিকে আরও কার্যকর এবং বাস্তবসম্মত করবে। রিজিজু জানান, এই বিলের মাধ্যমে করদাতাদের জন্য প্রক্রিয়া সরলীকরণ, কর জটিলতা হ্রাস এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কর প্রশাসনকে আরও দক্ষ করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বিলের মূল বৈশিষ্ট্য

নতুন আয়কর বিলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কর ছাড়ের সীমা বৃদ্ধি, ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট করদাতাদের জন্য নতুন সুবিধা এবং কর ফাঁকি রোধে কঠোর বিধান। বিলটি ডিজিটাল কর প্রশাসনকে উৎসাহিত করবে, যার ফলে করদাতারা সহজেই তাদের রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।

এছাড়া, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য কর ব্যবস্থাকে আরও সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিলেক্ট কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে, বিলটিতে সাধারণ মানুষের জন্য কর ছাড়ের সুযোগ বাড়ানো এবং কর বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া সরল করার বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

রিজিজুর বক্তব্য

সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, “এই বিলটি সিলেক্ট কমিটির সকল সুপারিশ এবং সংশোধনীকে বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সরকার জনগণের স্বার্থে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এই বিলটি পেশ করছে।”

Advertisements

তিনি আরও জানান, সরকার সংসদে এই বিল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য প্রস্তুত, এবং বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এটি পাস করার আশা করছে। রিজিজু বলেন, “আমরা চাই কর ব্যবস্থা এমন হোক যাতে সাধারণ মানুষের উপর বোঝা না পড়ে এবং ব্যবসায়ীরা সহজে তাদের কর পরিশোধ করতে পারেন।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

নতুন আয়কর বিল নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিজেপি নেতারা এই বিলকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন। বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো বলেন, “এই বিল ভারতের কর ব্যবস্থাকে আধুনিক ও স্বচ্ছ করবে। এটি মধ্যবিত্তের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে।”

তবে, বিরোধী দল কংগ্রেস এবং অন্যান্য দল বিলটির বিস্তারিত পরীক্ষার দাবি জানিয়েছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেন, “আমরা বিলটি পড়ে তার প্রভাব বিশ্লেষণ করব। সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে কিনা, তা আমরা দেখব।” তৃণমূল কংগ্রেসও বিলটির বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে এবং সংসদে এ নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছে।

উত্তরকাশীর বন্যা ত্রাণে ধামির বড় ঘোষণা, বিশেষ কমিটি গঠন

জনজীবনে প্রভাব

নতুন আয়কর বিলটি পাস হলে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের জন্য কর প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কর ছাড়ের সীমা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার মধ্যবিত্তের জন্য সুবিধা নিয়ে আসবে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রমেশ গুপ্তা বলেন, “যদি কর প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং ছাড় বাড়ে, তাহলে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এটি উপকারী হবে।” তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, বিলটির প্রকৃত প্রভাব বোঝার জন্য এর বিস্তারিত বিধান জানা জরুরি।

নতুন আয়কর বিল ভারতের কর ব্যবস্থায় একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছে। সিলেক্ট কমিটির সুপারিশ এবং সরকারের গৃহীত সংশোধনী এই বিলকে আরও কার্যকর করেছে। সোমবার সংসদে এই বিল পেশের পর এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই বিলটি পাস হলে ভারতের অর্থনীতি ও করদাতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।