রাখির দিনে কোচবিহারের পুণ্ডিমারি এলাকায় রক্তাক্ত ঘটনায় শিউরে উঠল গোটা জেলা (TMC Panchayat)। তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান কুন্তলা রায়ের ছেলে অমর রায়কে প্রকাশ্য দিবালোকে শুটআউটে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহার-২ নম্বর ব্লকের ডোডেয়ার হাট এলাকায়, যেখানে শনিবার বাজারে গিয়েছিলেন অমর।
বাইকে করে আসা দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি চালায়। মাথায় গুলি লাগায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অমর রায়ের। তাঁর সঙ্গে থাকা এক বন্ধুও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন এবং তাঁকে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এই ঘটনায় সন্দেহের তির উঠেছে বিজেপির দিকে, যদিও বিজেপির তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে, এবং পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
ঘটনার বিবরণ
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডাওয়াগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেত্রী কুন্তলা রায়ের ছেলে অমর রায় শনিবার দুপুরে ডোডেয়ার হাটে বাজার করতে গিয়েছিলেন। এই এলাকায় প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার হাট বসে, এবং রাখির দিন হওয়ায় সেখানে যথেষ্ট ভিড় ছিল। অমর এক বন্ধুর সঙ্গে মাংস কাটতে গিয়েছিলেন।
এ সময় একটি বাইকে করে আসা দুষ্কৃতীরা তাঁদের সঙ্গে বচসায় জড়ায়। বচসার মাঝেই দুষ্কৃতীরা অমরকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। মাথায় গুলি লাগায় তিনি ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন। তাঁর বন্ধুও গুলিবিদ্ধ হন, তবে তিনি বেঁচে যান এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পর দুষ্কৃতীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা অমরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
তৃণমূলের অভিযোগ
ঘটনার পর তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, “এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বিজেপি এলাকায় তৃণমূলের প্রভাব কমাতে এই ধরনের হিংসাত্মক পথ বেছে নিয়েছে। অমর রায় আমাদের দলের একজন তরুণ সমর্থক ছিলেন।
তাঁর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।” তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি তথা কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষও এই ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “বিজেপি তৃণমূল কর্মীদের টার্গেট করে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ড তারই প্রমাণ।” তৃণমূলের দাবি, এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা রয়েছে।
বিজেপির নীরবতা
এই ঘটনায় বিজেপির তরফে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে, এর আগে কোচবিহারে অনুরূপ ঘটনায় বিজেপি দাবি করেছিল যে তৃণমূল তাদের কর্মীদের ফাঁসানোর জন্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করছে। এই ঘটনায়ও তারা একই ধরনের দাবি করতে পারে বলে স্থানীয় সূত্রে মনে করা হচ্ছে।
পুলিশের তৎপরতা
ঘটনার খবর পাওয়ার পর পুণ্ডিমারি থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। জেলা পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থল পরীক্ষা করছে। অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি চলছে।”
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোল উদ্ধার করেছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছে। অমরের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। আহত যুবকের চিকিৎসা চলছে, এবং তাঁর বয়ান গ্রহণের চেষ্টা করছে পুলিশ।
জনজীবনে প্রভাব
এই ঘটনায় পুণ্ডিমারি এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে। স্থানীয়রা শোক ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। রাখির দিনে এমন হিংসাত্মক ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দা মানস দাস বলেন, “এই ধরনের ঘটনা আমাদের এলাকার শান্তি নষ্ট করছে। দোষীদের দ্রুত শাস্তি দেওয়া উচিত।” ঘটনার প্রতিবাদে তৃণমূল কর্মীরা পুণ্ডিমারি এবং চকচকা এলাকায় পথ অবরোধের ডাক দিয়েছে, যার ফলে স্থানীয় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
শান্তিপূর্ণ মিছিলের নির্দেশে পুলিশের লাঠি, বিস্ফোরক নির্যাতিতার বাবা
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
কোচবিহারে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে। সম্প্রতি, তৃণমূল কর্মী সুবোধ মালাকারকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, যা বিজেপি অস্বীকার করেছিল। এছাড়া, গত জুলাই মাসে তৃণমূল নেতা রাজু দেকে গুলি করার ঘটনায় বিজেপি বিধায়ক সুকুমার রায়ের ছেলে দীপঙ্কর রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই ঘটনাগুলো কোচবিহারে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়েছে।
অমর রায়ের হত্যাকাণ্ড কোচবিহারে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। তৃণমূলের অভিযোগ এবং বিজেপির নীরবতা এই ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙে রাঙিয়েছে। পুলিশ তদন্তে অভিযুক্তদের ধরতে সক্ষম হলে এই ঘটনার পেছনের প্রকৃত কারণ উদঘাটিত হতে পারে। তবে, এই হত্যাকাণ্ড কোচবিহারে আগামী দিনে আরও বড় আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করতে পারে।