গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণবঙ্গে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে কলকাতার সবজি বাজারে চড়া (Vegetable Prices) দাম সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় সবজির দাম এতটাই বেড়েছে যে, অনেকের কাছে বাজার করা এখন একটি ভয়ের বিষয় হয়ে উঠেছে। টানা বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতি, সরবরাহে ঘাটতি এবং পরিবহনের অসুবিধা এই দাম বাড়ার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আজকের বাজার দর
কলকাতার বিভিন্ন বাজারে, যেমন মানিকতলা, গড়িয়াহাট, কাওরানবাজার এবং অন্যান্য স্থানীয় বাজারে সবজির দামে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। কাঁচালঙ্কা, যা বাঙালি রান্নার একটি অপরিহার্য উপকরণ, তার দাম এখন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা প্রতি কেজি।
গত সপ্তাহে এই দাম ছিল ১৫০-১৮০ টাকার মধ্যে, অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দামে ৫০-৭০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। টমেটোর দামও এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বাজারে টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে, যেখানে গত মাসে এর দাম ছিল ৮০-৯০ টাকা।
বেগুন, যা প্রায় প্রতিটি বাঙালি পরিবারের রান্নাঘরে নিয়মিত ব্যবহৃত হয়, তার দাম বাজারভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা প্রতি কেজি। বড় সাইজের বেগুন কিছু ক্ষেত্রে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। পটল, ঝিঙে, শসা এবং করলার দামও ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। এমনকি সাধারণত বর্ষাকালে সস্তা থাকা কুমড়ো এবং কচুর দামও বেড়েছে, যা যথাক্রমে ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং ৬০ থেকে ৮০ টাকা প্রতি কেজি।
আলু এবং পেঁয়াজের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হলেও এগুলোও সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয়বহুল। জ্যোতি আলু ২২ থেকে ৩০ টাকা এবং চন্দ্রমুখী আলু ২৮ থেকে ৪৫ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম ৫৫ থেকে ৭৫ টাকা প্রতি কেজি, ছোট পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশি। শাকসবজির মধ্যে পালং শাক ১২-১৫ টাকা প্রতি আঁটি হলেও, কলমি শাক এবং লাল শাক ২০-২৫ টাকা প্রতি আঁটি বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ার কারণ
বিক্রেতা এবং কৃষকদের মতে, এই দাম বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ টানা বৃষ্টির ফলে ফসলের ক্ষতি এবং সরবরাহে ঘাটতি। হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো এলাকায় কৃষকরা জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে খেতে জল জমে ফসল পচে গেছে। অনেক জায়গায় বীজ নষ্ট হয়েছে, এবং সদ্য ফল ধরা গাছগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বাজারে সবজির সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। একজন কৃষকের কথায়, “গত সপ্তাহে পটল তুলে বাজারে পাঠিয়েছিলাম, প্রায় ৬০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে জল ও অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে।”
এছাড়া, টানা বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট জলমগ্ন হওয়ায় গ্রাম থেকে শহরে সবজি পরিবহনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, “আগে যেখানে দিনে ১৫-২০ গাড়ি সবজি আসত, এখন ৭-৮ গাড়িতে সীমাবদ্ধ। ফলে দাম বাড়ছে।”
ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া
সাধারণ ক্রেতারা এই দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। মানিকতলা বাজারের একজন গৃহবধূ বলেন, “কাঁচালঙ্কা আর টমেটোর দাম এত বেশি যে রান্নায় ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছি। বাজারে এসে মনে হয়, সবকিছুই এখন বিলাসিতা।” আরেকজন ক্রেতা জানান, “এক কেজি বেগুন কিনতে ৮০ টাকা লাগছে! এভাবে চললে পরিবারের খরচ চালানো মুশকিল।”
ঝাড়খণ্ডের চাণ্ডিলে দুই মালগাড়ির মুখোমুখি ধাক্কা, লাইনচ্যুত ২০টি কামরা, বাতিল গুচ্ছ ট্রেন
সরকারি উদ্যোগ ও সম্ভাব্য সমাধান
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে, যারা বিভিন্ন বাজারে দাম পর্যবেক্ষণ করছে। তবে, ক্রেতারা মনে করছেন এই উদ্যোগ এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। কৃষি দফতরের একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন এবং কৃষকদের সাহায্যের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে, বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সরবরাহ বাড়াতে এবং পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
কলকাতার বাজারে সবজির চড়া দাম সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বড় প্রভাব ফেলছে। বৃষ্টির প্রভাব কমলে এবং সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে বলে বিক্রেতারা আশা প্রকাশ করছেন। তবে, এই পরিস্থিতিতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপের প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ এখন অপেক্ষায় রয়েছে এমন একটি সময়ের, যখন বাজারে গিয়ে তারা সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় সবজি কিনতে পারবেন।