কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন শুক্রবার লোকসভায় আয়কর বিল, ২০২৫ (Income Tax Bill 2025) প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এটি কোনও ‘পরিত্যাগ’ নয়, বরং একটি কৌশলগত পদক্ষেপ— এমনটাই জানাল কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন রূপে, অধিকতর সংশোধিত আয়কর বিলটি আগামী ১১ আগস্ট লোকসভায় পুনরায় পেশ করা হবে বলে জানা গেছে।
পুরনো আইন পাল্টে নতুন কাঠামোর প্রয়াস:
বর্তমানে ভারতে আয়কর ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে আয়কর আইন, ১৯৬১-এর মাধ্যমে। এটি বিগত ছয় দশকের পুরনো আইন, যার মধ্যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহু সংশোধন ও সংযোজন করা হলেও, একটি পূর্ণাঙ্গ আধুনিকীকরণ এখনো হয়নি। আয়কর বিল, ২০২৫ সেই উদ্দেশ্যেই আনা হয়েছিল— দেশের কর ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী আধুনিক, স্বচ্ছ, ও সহজতর করার লক্ষ্যে।
নতুন আয়কর বিলে করদাতাদের জন্য ছিল একাধিক প্রস্তাবিত পরিবর্তন। এর মধ্যে ছিল কর ছাড় ও সংজ্ঞাগুলোর সরলীকরণ, অতিরিক্ত আইনি জটিলতা দূরীকরণ, ডিজিটাল অর্থনীতিতে উদ্ভূত কর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, ভার্চুয়াল ডিজিটাল অ্যাসেট ও ক্রিপ্টোকারেন্সি আয় করের উপযুক্ত কাঠামো তৈরি প্রভৃতি।
সংসদীয় সিলেক্ট কমিটির সুপারিশ:
এই আয়কর বিলটি সংসদীয় সিলেক্ট কমিটির কাছে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এই কমিটি বিশেষজ্ঞ, নীতি নির্ধারক ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে পরামর্শ করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দেয়।
কমিটি দুটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয় যা বিশেষভাবে নাগরিকদের জন্য উপকারী হতে পারে:
1. ৩০ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন: বর্তমানে বাড়ির আয় থেকে পৌরকর বাদ দিয়ে ৩০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। এই নিয়মটি স্পষ্টভাবে আইনে উল্লেখ করার পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে বিভ্রান্তি না থাকে।
2. গৃহঋণের সুদের ছাড়: বর্তমানে শুধুমাত্র স্ব-অধিবাসিত বাড়ির জন্য এই সুবিধা পাওয়া যায়। কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী, এই ছাড় ভাড়ায় দেওয়া বাড়ির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া উচিত।
এছাড়া করের বিভিন্ন সংজ্ঞা, অব্যাহতি, এবং আপিল প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও নাগরিকবান্ধব করার ওপর জোর দেয় কমিটি।
বিল প্রত্যাহারের কারণ:
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন স্পষ্টভাবে জানান, এটি কোনও আইন সংস্কারের প্রত্যাখ্যান নয় বরং একটি ‘স্ট্র্যাটেজিক উইথড্রয়াল’। সরকারের লক্ষ্য হল— সিলেক্ট কমিটির গঠনমূলক সুপারিশগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি অধিকতর পরিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য আইন পেশ করা।
তিনি বলেন, “কমিটির প্রস্তাবগুলো অত্যন্ত মূল্যবান ও সময়োপযোগী। আমরা চাই এই পরিবর্তনগুলি অর্থবহভাবে আইনে প্রতিফলিত হোক। তাই পুরনো খসড়া বিলটি প্রত্যাহার করে নতুন সংস্করণ আনা হচ্ছে।”
আগামী বিল কেমন হবে?
সরকার সূত্রে জানা যাচ্ছে, সংশোধিত বিলটিতে অধিকাংশ সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যেমন:
কর ছাড়ের বিষয়গুলির পুনর্গঠন
ই-কমার্স ও ডিজিটাল লেনদেনে কর কাঠামো শক্তিশালী করা
‘বেস ইয়ার’ ও ‘অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার’-এর সংজ্ঞায় পরিবর্তন
কমপ্লায়েন্স সহজতর করা
বাছাইকৃত কর ছাড় ও ইনসেনটিভ বজায় রেখে সরলীকরণ
নতুন বিলটি পেশ হলে সংসদে এ নিয়ে বিতর্ক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে বিরোধী দলগুলির তরফেও সিলেক্ট কমিটির সুপারিশকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মত:
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আয়কর আইন পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হলেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। একটি আধুনিক, প্রযুক্তিসম্মত, ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কর কাঠামো দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সহায়ক হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সরকার সঠিকভাবে সুপারিশগুলি আইনে অন্তর্ভুক্ত করে, তবে এটি করদাতাদের জন্য যেমন স্বস্তিদায়ক হবে, তেমনি রাজস্ব আদায়েও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বহু প্রতীক্ষিত আয়কর বিল ২০২৫ প্রত্যাহার করে কেন্দ্র যে নতুনভাবে বিলটি আনতে চলেছে, তা নাগরিক ও করদাতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ১১ আগস্ট লোকসভায় এই বিল পুনরায় উপস্থাপনের পরই বোঝা যাবে, সরকার কতটা সুপারিশ গ্রহণ করেছে এবং কতটা বাস্তবায়ন করেছে।