নয়াদিল্লির টলকাটোরা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো ‘ভারত ম্যাঙ্গো ফেস্টিভাল’ (Mango Festival), যা ভারতের আমের বৈচিত্র্য ও কৃষকদের প্রতি সম্মান জানানোর এক অনন্য উদ্যোগ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই উৎসবের আয়োজক কানপুরের সংসদ সদস্য রমেশ আওয়স্থিকে অভিনন্দন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “এই উৎসব শুধু আমের প্রদর্শনী নয়, এটি কৃষকদের সঙ্গে প্রযুক্তি, বাজার ও গবেষণাকে যুক্ত করার এক মহত্ উদ্যোগ।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের উদ্যোগ আমাদের দেশের কৃষি ও কৃষকদের গর্বিত করে।”
১৮ বছরের দীর্ঘ পথচলা:
এই উৎসবটি প্রথম শুরু হয়েছিল ১৮ বছর আগে রমেশ আওয়স্থির ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা হিসেবে। আজ তা একটি জাতীয় প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে, যেখানে ভারতের ৩৫০টিরও বেশি আমের জাত প্রদর্শিত হয়। শুধু প্রদর্শনী নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কৃষকদের জন্য তথ্যভিত্তিক অধিবেশন, উদ্ভাবনী চর্চা, এবং ‘ফার্মার ফেলিসিটেশন’—একটি সম্মাননা অনুষ্ঠান, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সফল কৃষকদের স্বীকৃতি দেয়।
সফল কৃষকদের সম্মাননা:
এই বছর উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটক ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত ৫০ জনেরও বেশি কৃষককে সম্মানিত করা হয়। তারা জৈব চাষ, বায়ো-ফার্টিলাইজারের ব্যবহার, আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতি, শ্রেণিবিভাজন কৌশল এবং নতুন বাজার সংযোগ তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।
বিশিষ্ট অতিথিদের উপস্থিতি:
দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা এই উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন ১৮ জনেরও বেশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, যাঁদের মধ্যে ছিলেন—বিএল বর্মা, রামদাস আটাওয়ালে, শ্রিপাদ নাইক, গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, ভগীরথ চৌধুরি, এসপি সিং বাঘেল, বীরেন্দ্র কুমার, সাবিত্রী ঠাকুর, প্রতাপরাও জাধব, রাজভূষণ চৌধুরি, হর্ষ মালহোত্রা, টোকেন সাহু, রবনীত সিং বিট্টু, রামনাথ ঠাকুর, অজয় তমটা, দুর্গাদাস, নিমুবেন প্যাটেল এবং অনুরাগ ঠাকুর। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, ২০০-র বেশি সাংসদ ও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব—চলচ্চিত্র, সাহিত্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান, সাংবাদিকতা ও আধ্যাত্মিকতার জগৎ থেকে।
প্রদর্শিত হলো নানা প্রজাতির আম:
এই উৎসবে আমপ্রেমীদের জন্য ছিল দারুণ চমক। দাশেরি, চৌসা, কেসর, সাফেদা, আলফোনসো, বানগানপল্লি, ফজলি, নীলম, মল্লিকা প্রভৃতি প্রজাতির পাশাপাশি বিশেষ আকর্ষণ ছিল ‘মোদি ম্যাঙ্গো’। এটি প্রধানমন্ত্রীর নামে নামাঙ্কিত একটি অনন্য জাতের আম, যা প্রচুর দর্শনার্থীর আগ্রহ কেড়েছে।
শ্রী অন্ন আন্দোলনের অংশ হিসেবে মিলেটভিত্তিক লাঞ্চ:
উৎসবে একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল মিলেট (শ্রী অন্ন) ভিত্তিক কমিউনিটি লাঞ্চ। ভারত সরকারের মিলেট প্রচার অভিযানের অংশ হিসেবে আয়োজিত এই লাঞ্চে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন প্রকার মিলেট খাবারের স্বাদ গ্রহণ করেন এবং তা কীভাবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনাও পান।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা:
উৎসবের মঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনারও ব্যবস্থা ছিল। কবি কুমার বিশ্বাস তাঁর চিরচেনা স্বরে মন ছুঁয়ে যাওয়া কবিতা পাঠ করেন। গায়ক অঙ্কিত তিওয়ারি তাঁর জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন, কবিতা তিওয়ারি এবং অভিনেতা আরবাজ খানও মঞ্চ মাতান তাঁদের পরিবেশনার মাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা:
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উৎসবের আয়োজক রমেশ আওয়স্থিকে পাঠানো চিঠিতে কৃষকদের উন্নয়নে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, “এই ধরনের উদ্যোগ কৃষকদের ক্ষমতায়ন করে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারতীয় আমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়।”
কৃষি ও সংস্কৃতির মিলন:
‘ভারত ম্যাঙ্গো ফেস্টিভাল’ আজ শুধুই একটি কৃষিভিত্তিক প্রদর্শনী নয়, এটি এক বিশাল সাংস্কৃতিক ও জাতীয় উদ্যোগ, যা কৃষকদের প্রতিভা ও পরিশ্রমকে মঞ্চ দেয়, এবং দেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে সম্মান জানায়। এই উৎসব বার্তা দেয়—ভারতের কৃষক শুধু খাদ্য উৎপাদনকারী নন, তাঁরা জাতীয় সম্পদের ধারক ও বাহক।
এই উৎসব নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে কৃষিকে কেন্দ্র করে এমন উদ্যোগ না শুধুমাত্র কৃষকদের সম্মান জানাতে সাহায্য করে, বরং এটি কৃষিপণ্যকে একটি সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিচয়ে পরিণত করে। ‘ভারত ম্যাঙ্গো ফেস্টিভাল’-এর মতো উদ্যোগ আরও বাড়লে ভারতীয় কৃষির উন্নয়নে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।