চলতি বর্ষপঞ্জি বছরে খাদ্যপণ্যের দাম (Food Prices) মূলত স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রিত থেকেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ভোক্তা বিষয়ক, খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রক। শুক্রবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রক জানায়, সরকার নিয়মিতভাবে প্রধান প্রধান ভোগ্যপণ্যের মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত হস্তক্ষেপ করছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খাদ্যপণ্যের অধিকাংশের দাম বছরে বছরে স্থিতিশীল বা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে গৃহনির্মিত থালির (হোমমেড থালি) খরচ ১৪ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার তথ্যও এই মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দেয় বলে দাবি করা হয়েছে বিবৃতিতে।
টমেটোর দাম বাড়ার কারণ: আবহাওয়াজনিত সমস্যা:
সরকারি বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে বিভিন্ন স্থানে টমেটোর খুচরো দাম কিছুটা বেশি থাকলেও, তা মৌলিক চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্যহীনতা বা উৎপাদন ঘাটতির কারণে নয় বরং কিছু অস্থায়ী ও স্থানীয় পরিবেশগত সমস্যার কারণে হয়েছে।
বিশেষ করে দিল্লি ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রবল বর্ষণের কারণে টমেটোর সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে এবং এর ফলে খুচরো বাজারে দাম বেড়ে যায়। দিল্লিতে গত মাসের শেষ দিকে টমেটোর দাম ৮৫ টাকা প্রতি কেজিতে পৌঁছেছিল, যা বর্তমানে কমে গড় দাম ৭৩ টাকা প্রতি কেজিতে নেমে এসেছে।
এনসিসিএফ-এর উদ্যোগ:
টমেটোর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে জাতীয় ভোক্তা সমবায় ফেডারেশন (NCCF) ৪ আগস্ট ২০২৫ থেকে দিল্লির আজাদপুর মান্ডি থেকে সরাসরি টমেটো সংগ্রহ করে কম লাভে বিক্রি শুরু করেছে।
এই কর্মসূচি চালানো হচ্ছে এনসিসিএফ-এর নির্দিষ্ট স্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র যেমন নেহরু প্লেস, উদ্যোগ ভবন, পটেল চৌক ও রাজীব চৌকে। পাশাপাশি ৬ থেকে ৭টি মোবাইল ভ্যানের মাধ্যমেও বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি চলছে।
এখন পর্যন্ত এনসিসিএফ ২৭,৩০৭ কেজি টমেটো বিক্রি করেছে, যার দাম ছিল ৪৭ টাকা থেকে ৬০ টাকা প্রতি কেজি, যা সংগ্রহমূল্যের ওপর নির্ভর করেছে।
অন্যান্য শহরে স্থিতিশীলতা:
চেন্নাই ও মুম্বাইয়ের মতো প্রধান শহরগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে তেমন কোনও প্রাকৃতিক ব্যাঘাত না থাকায় সেখানে টমেটোর দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চেন্নাইয়ে বর্তমানে গড় খুচরো দাম ৫০ টাকা প্রতি কেজি এবং মুম্বাইয়ে ৫৮ টাকা প্রতি কেজি, যা দিল্লির তুলনায় অনেকটাই কম।
সর্বভারতীয় গড় মূল্য:
এই মুহূর্তে টমেটোর সর্বভারতীয় গড় খুচরো দাম ৫২ টাকা প্রতি কেজি, যা গত বছরের ৫৪ টাকা থেকে কম এবং ২০২৩ সালের ১৩৬ টাকার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে নিম্নে রয়েছে।
সরকারের মতে, গত কয়েক বছরের তুলনায় এই বছর বর্ষাকালে পেঁয়াজ, আলু ও টমেটোর মতো মূল সবজিগুলোর দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো ২০২৪-২৫ সালে এই সবজিগুলোর উৎপাদন গত বছরের তুলনায় বেশি হওয়া।
পেঁয়াজের জন্য দাম স্থিতিশীল রাখার পরিকল্পনা:
এই বছর সরকার ৩ লক্ষ টন পেঁয়াজ দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সংরক্ষণ করেছে। এই ‘মূল্য স্থিতিকরণ বাফার’ থেকে ধাপে ধাপে এবং পরিকল্পিতভাবে পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যার প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে শুরু হবে।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের অঙ্গীকার:
সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, সাধারণ মানুষের রান্নার খরচ যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, তার জন্য প্রতিনিয়ত নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। খাদ্য মজুদ, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, সহায়ক মূল্যে কৃষিপণ্য কেনা, বাফার স্টক তৈরি, এবং প্রয়োজনে দ্রুত বাজারে হস্তক্ষেপ — এই সবকিছুই কেন্দ্রীয় সরকারের খাদ্য মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে সচেতন এবং সক্রিয় ভূমিকারই প্রতিফলন।
ভোক্তাবান্ধব এই নীতির ফলে একদিকে যেমন কৃষকদের উৎপাদনের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে, তেমনি ভোক্তারাও সুবিধাভোগী হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে আগামী মাসগুলোতেও খাদ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার স্বাভাবিক মাত্রায় বজায় থাকবে।