২৫৬ কোটি টাকার রেলের ওয়ার্কশপ, কর্মসংস্থান ও শিল্পোন্নয়নে নতুন দিগন্ত

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের উদ্যোগে অসমের কোকরাঝাড় জেলার বাসবাড়িতে গড়ে উঠতে চলেছে একটি আধুনিক ওয়াগন পিরিওডিক ওভারহলিং (পিওএইচ) ওয়ার্কশপ (Wagon Overhaul Workshop), যার প্রথম পর্যায়ের আনুমানিক…

Indian Railways

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের উদ্যোগে অসমের কোকরাঝাড় জেলার বাসবাড়িতে গড়ে উঠতে চলেছে একটি আধুনিক ওয়াগন পিরিওডিক ওভারহলিং (পিওএইচ) ওয়ার্কশপ (Wagon Overhaul Workshop), যার প্রথম পর্যায়ের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৬.৩৫ কোটি টাকা। এই বৃহৎ প্রকল্পটি শুধু রেলওয়ে পরিকাঠামোর উন্নয়নেই নয়, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, দক্ষতা বিকাশ, স্থানীয় সহযোগী শিল্পের বিকাশ এবং বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজন (বিটিআর) কে উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি প্রধান লজিস্টিক ও শিল্পকেন্দ্রে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রায় ২৫০০ বিঘা জমির উপর গড়ে ওঠা এই ওয়ার্কশপটি কৌশলগতভাবে বাসবাড়ি স্টেশন থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার এবং রূপসী বিমানবন্দর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই অবস্থান মাল্টিমডাল কানেক্টিভিটির সুবিধা এনে দেবে, যা মালবাহী পরিবহণ ও যাত্রী পরিষেবায় সমানভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

   

পরিদর্শনকালে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার শ্রী চেতন কুমার শ্রীবাস্তব নতুন লাইন, ডাবলিং এবং মাল্টিমডাল প্রকল্পের বাস্তবায়নের ফলে আসন্ন সময়ে মাল পরিবহণ বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, বাসবাড়ি পিওএইচ ওয়ার্কশপ রেলওয়ের পরিচালনাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং আঞ্চলিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে।

ওয়ার্কশপটি অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ নির্মিত হবে। এর মধ্যে থাকবে স্ট্রিপিং, বডি রিপিয়ার, পেইন্টিং, আনুষঙ্গিক কাজ এবং মান নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা শপ। ধাপে ধাপে এর পূর্ণ ওভারহল ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে প্রতি মাসে ৭৫টি ওয়াগনের রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ২৫০টি ওয়াগনে উন্নীত করা হবে।

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জল কিশোর শর্মা জানান, জেনারেল ম্যানেজার সুরক্ষা, গুণমান এবং স্থায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্পগুলির সময়মতো সমাপ্তির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং দ্রুত কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

Advertisements

এই প্রকল্পটি বিটিআর অঞ্চলে শুধু রেল পরিষেবা নয়, পর্যটন, স্থানীয় ব্যবসা এবং পরিবহণ খাতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্থানীয় জনগণের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ, দক্ষতা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় সহায়ক শিল্পের বিকাশ—সব মিলিয়ে এই ওয়ার্কশপকে কেন্দ্র করে একটি অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেম গড়ে উঠবে।

পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শ্রী উত্তম হাজোয়ারী, রেলের ঊর্ধ্বতন আধিকারিক এবং স্থানীয় প্রশাসনিক প্রতিনিধিরা। সবাই একমত যে, এই ওয়ার্কশপ বিটিআরের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে এক মাইলফলক হয়ে উঠবে।

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, শুধুমাত্র রেল পরিকাঠামো নয়, সমগ্র অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যই তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যখন এই ওয়ার্কশপ পুরোপুরি কার্যকর হবে, তখন এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের শিল্প মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করবে।