ক্ষমতায় আসার মাত্র ১৩ মাসের মাথায় ওড়িশায় বিজেপি সরকারের (Odisha BJP Government) এক সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। বিষয়টি রঙের, কিন্তু তা ঘিরে উত্তাল রাজ্যের রাজনীতি। সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, রাজ্যের সমস্ত সরকারি (Odisha BJP Government) ভবনের রং হবে গেরুয়া। পুরনো হোক বা নতুন, কোনও ভবনই এর ব্যতিক্রম হবে না। স্বাভাবিকভাবেই এই নির্দেশের পর উঠেছে ‘গৈরিকীকরণ’-এর অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার ওড়িশার পূর্ত দপ্তরের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়, “এ বার থেকে সমস্ত সরকারি ভবনের রং গেরুয়া হবে। রাজ্য সরকার এই রঙে সিলমোহর দিচ্ছে।” বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সরব হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নষ্ট করে ধর্মীয় রং চাপিয়ে দিতে চাইছে বিজেপি।
প্রসঙ্গত, ওড়িশায় (Odisha BJP Government) রং বিতর্ক নতুন নয়। ইতিমধ্যেই একাধিকবার সরকারি ভবন, বিদ্যালয়, এমনকি ইউনিফর্মেও গেরুয়া রঙের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত মার্চ মাসেই রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্কুল ভবনের রং গেরুয়া করার নির্দেশ জারি হয়। তারও আগে, অক্টোবর মাসে ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরের প্রধানদের বলা হয়েছিল, ভবনের রং গেরুয়া করতে হবে। ধারাবাহিক এই সিদ্ধান্তগুলিকে এক সূত্রে গেঁথে বিরোধীরা বলছে, এটি বিজেপির সংগঠিত ‘গৈরিকীকরণ’-এর কৌশল।
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেডি-র অভিযোগ, বিজেপি সরকার (Odisha BJP Government) প্রকৃত সমস্যাগুলি থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিজেডি নেতা প্রদীপ মহান্তি বলেন, “নারী নিরাপত্তা নিয়ে ওড়িশায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রশ্নফাঁস, স্বাস্থ্য পরিষেবার দৈন্য, কর্মসংস্থানের অভাব— এসব গুরুতর সমস্যা থেকে দৃষ্টি সরাতেই বিজেপি সরকার ‘রঙিন খেলা’ শুরু করেছে।”
একই সুর কংগ্রেসেরও। প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি জয়দেব জেনা বলেন, “ভবনের রং বদল, স্কুলপড়ুয়াদের পোশাকের রং বদল— সব কিছুতেই বিজেপি গেরুয়া চাপাতে চাইছে। এ এক দুর্বল মানসিকতার প্রতিফলন। জনস্বার্থের কোনও বিষয় নয় এটা, বরং বিভাজনের রাজনীতির কৌশল মাত্র।”
সরকারি তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত বিতর্ক নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। তবে বিজেপির অন্দরের একাংশ বলছে, গেরুয়া রং হিন্দু সংস্কৃতির প্রতীক। এতে বিভ্রান্তির কিছু নেই, বরং ‘এক রাজ্য, এক ভাবনা’ তৈরি করতেই এই পদক্ষেপ।
তবে রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসনিক ভবনের রং বদল নিছক রূপান্তরের চিহ্ন হিসেবে দেখলেও, তা নিরপেক্ষ থাকা উচিত। যেকোনও সরকার জনগণের করের টাকায় নির্মিত দপ্তরের উপর নিজের দলীয় রঙের ছাপ ফেললে প্রশ্ন উঠবেই। আর সেটা যদি হয় ধর্মীয় রঙ, তাহলে বিতর্কের মাত্রা আরও বাড়ে।
সাধারণ মানুষের একাংশও বিভক্ত এই সিদ্ধান্তে। কেউ বলছেন, রং দিয়ে তো কাজের গুণমান নির্ধারিত হয় না, বরং কাজে নজর দেওয়া উচিত। আবার অনেকে মনে করছেন, এটি একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা, যার লক্ষ্য সাংস্কৃতিক আধিপত্য কায়েম করা।
সব মিলিয়ে, ওড়িশার রাজনীতিতে এই ‘গেরুয়া বিতর্ক’(Odisha BJP Government) এখন চরমে। সামনে পঞ্চায়েত ও পুরসভা নির্বাচন। তার আগেই এই ‘রঙের রাজনীতি’ যে আরও উত্তপ্ত হবে, তা বলাই বাহুল্য। এখন দেখার, সরকার কি এই সিদ্ধান্তে অনড় থাকে, নাকি বিতর্কের চাপের মুখে কোনও পরিবর্তন আনে।