শুক্রবার এক অভিনব দৃশ্যের সাক্ষী থাকল সংসদ ভবনের সামনের রাজপথ। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ভোট চুরি এবং বাঙালিদের উপর অব্যাহত নির্যাতনের অভিযোগ তুলে দিল্লির রাজপথে প্রতিবাদে সামিল হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্যরা। শুধু তৃণমূলই নয়, তাঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ালেন ইন্ডিয়া ব্লকের অন্যান্য শরিক দলগুলির সদস্যরাও। এই প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিতে নিজে হাজির ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
তাঁর উপস্থিতি এই বিক্ষোভকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একদিকে, বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উত্তর ভারতীয় রাজ্যগুলিতে যে বৈষম্য ও নিপীড়ন চলছে, তা নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। অন্যদিকে, দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংস করার যে অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে উঠছে, তাকেও তুলে ধরেছে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি।
প্রতিবাদে অংশ নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,(Abhishek Banerjee)
“আজ গোটা দেশজুড়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে। ভোট লুট হচ্ছে, বিরোধীদের হেনস্তা করা হচ্ছে, আর বাংলার মানুষ, বিশেষ করে বাঙালিদের উপর চলছে পরিকল্পিত নির্যাতন। আমরা চুপ করে থাকব না।”
তিনি আরও বলেন,
“সংসদে আমাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। তাই আজ আমরা রাস্তায় নেমে দেশবাসীকে বলছি— গণতন্ত্রের ওপর এই আঘাত মেনে নেওয়া যাবে না।”
অন্যতম তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন,
“বাঙালিদের নিয়ে বারবার কটাক্ষ করা হচ্ছে। বিজেপি নেতারা এমন ভাষায় কথা বলছেন, যা শুধু অপমানজনক নয়, তা একটি সম্প্রদায়ের মানসিকতা, ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে অপমান করছে। আজ আমরা তার প্রতিবাদেই এখানে।”
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিজেপি শাসিত বেশ কয়েকটি রাজ্যে স্থানীয় বাঙালি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হেনস্থা ও বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন উপনির্বাচনে ভোট লুট, বিরোধীদের মনোনয়ন বাতিল ও প্রশাসনিক জুলুম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রেক্ষিতেই তৃণমূল ও ইন্ডিয়া ব্লকের অন্যান্য দলগুলি একজোট হয়ে দিল্লির সংসদ ভবনের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
এদিন প্রতিবাদস্থলে দেখা গিয়েছে, বহু সাংসদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড— তাতে লেখা ছিল, “বাঙালিকে অপমান বন্ধ করো”, “ভোট চুরি চলবে না”, “গণতন্ত্র বাঁচাও”। কেউ কেউ বাংলা ভাষায় স্লোগান তুলেছেন, “বাঙালির অপমান মানি না, মানব না।” সেই সঙ্গে “ইন্ডিয়া জিতবে, বিজেপি হারবে” ধ্বনিও শোনা যায় রাজপথ জুড়ে।
ইন্ডিয়া ব্লকের অন্যতম শরিক দল সমাজবাদী পার্টি ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সাংসদেরাও এদিনের প্রতিবাদে অংশ নেন। তাঁরা বলেন, আজ শুধু বাঙালির অপমান নয়, দেশের সমস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর রোধ করা হচ্ছে। এ লড়াই সামগ্রিকভাবে ভারতীয় গণতন্ত্রকে রক্ষার লড়াই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে যেখানে এনডিএ বনাম ইন্ডিয়া ব্লক লড়াই চরমে উঠেছে, সেখানে অভিষেকের এই নেতৃত্ব ও তৃণমূলের সক্রিয়তা বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলতে পারে। বিশেষ করে বাংলার বাইরে তৃণমূলের সম্প্রসারণ নীতিতে এই ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
শেষ পর্যন্ত বাঙালিদের উপর নির্যাতন হোক বা গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপ— কোনওটাই যে তৃণমূল মেনে নেবে না, আজকের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তা স্পষ্ট করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের সাংসদরা।