নরেন্দ্র মোদী (Pm Modi) সরকারের অন্যতম কৃষককল্যাণমূলক প্রকল্প হল ‘পিএম-কিষান সম্মান নিধি’। এই প্রকল্পের অধীনে দেশের লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিকে বছরে ৬,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে চালু হওয়া এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল কৃষকদের আর্থিক দুশ্চিন্তা খানিকটা হলেও লাঘব করা। যদিও দেশের নানা প্রান্ত থেকে কৃষকদের দাবি, এই টাকার পরিমাণ বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় খুবই সামান্য এবং তা যথেষ্ট নয়।
এই প্রেক্ষাপটে সংসদের এক স্ট্যান্ডিং কমিটি (সংসদীয় স্থায়ী কমিটি) সম্প্রতি সুপারিশ করেছিল, পিএম-কিষান প্রকল্পে বার্ষিক অনুদানের পরিমাণ দ্বিগুণ করে ১২ হাজার টাকা করা হোক। কিন্তু সেই সুপারিশ মানতে নারাজ মোদী সরকার। চলতি বাদল অধিবেশনে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ তথা লোকসভায় দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি সরাসরি জানতে চান, সরকার কি সংসদীয় কমিটির প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে?
প্রতুত্তরে কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী রামনাথ ঠাকুর সংসদে লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানান, ‘পিএম-কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধির কোনও পরিকল্পনা বর্তমানে সরকারের বিবেচনায় নেই।’ অর্থাৎ স্পষ্টতই জানিয়ে দেওয়া হল, কৃষকদের অনুদান দ্বিগুণ করার কোনও চিন্তা-ভাবনা সরকারের নেই।
এই উত্তর সামনে আসতেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে বিতর্ক। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কৃষকদের প্রকৃত স্বার্থ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও আন্তরিকতা নেই। কেন্দ্রের কাছে কৃষক শুধুমাত্র ভোটব্যাঙ্ক। ভোটের সময় কৃষকদের জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতিগুলি রূপায়ণ হয় না।
এদিকে কৃষক সংগঠনগুলিও এই সিদ্ধান্তে হতাশ। তাদের বক্তব্য, বর্তমান বাজারদরে সারের দাম, কীটনাশক, ডিজেল ইত্যাদি খরচ যে হারে বেড়েছে, তাতে বছরে ৬ হাজার টাকায় কোনও চাষির কিছুই হয় না। বিশেষ করে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা এই অনুদানের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ হলে অন্তত কিছুটা সুরাহা হতো।
তবে কেন্দ্রীয়(Pm Modi) সরকারের ব্যাখ্যা, এই প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যেই ১১ কোটিরও বেশি কৃষক উপকৃত হচ্ছেন। এখন যদি একধাক্কায় অনুদানের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়, তাহলে সরকারের উপর অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা সৃষ্টি হবে। তাই আপাতত বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রশ্নই নেই।
কিন্তু বিরোধীরা বলছে, দেশের অন্যান্য নানা প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার যে খরচ করছে, তার তুলনায় কৃষকদের জন্য কিছু বাড়তি বরাদ্দ কোনওভাবেই বেশি নয়। যাঁরা দেশের খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, তাঁদের ন্যূনতম সহায়তা দিতেও সরকার ব্যর্থ হচ্ছে — এই অভিযোগও উঠছে নানা মহলে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী ২০২৬-এ ফের লোকসভা নির্বাচন। তার আগে কৃষকদের মন জয় করা যে কোনও সরকারের কাছেই বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই মুহূর্তে কৃষকদের ক্ষোভ যথেষ্ট স্পষ্ট। এখন দেখার, ভবিষ্যতে মোদী সরকার এই প্রকল্পে কোনও পরিবর্তন আনে কি না।