বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস (UPI) পরিষেবা সারা দেশে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। গুগল পে, ফোনপে, পেটিএম-সহ একাধিক জনপ্রিয় ইউপিআই অ্যাপের মাধ্যমে বহু ব্যবহারকারী লেনদেন করতে পারেননি। এর ফলে ব্যক্তিগত থেকে ব্যবসায়িক, নানা ক্ষেত্রেই মানুষ সমস্যায় পড়েন।
ডাউনডিটেক্টরের তথ্য অনুযায়ী:
বিশ্বব্যাপী পরিষেবা বিপর্যয় পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট Downdetector জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮:৩০টা নাগাদ ইউপিআই সংক্রান্ত ২,০০০-র বেশি অভিযোগ জমা পড়ে। এই অভিযোগগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশই ছিল পেমেন্ট করতে না পারার বিষয়ে। ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করেন যে, লেনদেনের সময় পেমেন্ট ব্যর্থ হওয়া, টাকা কেটে যাওয়ার পরেও প্রাপক না পাওয়া, অথবা দীর্ঘ সময় ধরে লেনদেন আটকে থাকার মতো সমস্যার সম্মুখীন হন।
বিভিন্ন অ্যাপ এবং ব্যাংকে প্রভাব:
এই প্রযুক্তিগত ত্রুটির জেরে গুগল পে (Google Pay), ফোনপে (PhonePe), পেটিএম (Paytm), আমাজন পে (Amazon Pay) সহ অন্যান্য ইউপিআই ভিত্তিক অ্যাপে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। বড়ো বড়ো ব্যাংক যেমন স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (SBI), এইচডিএফসি ব্যাংক, ব্যাংক অফ বরোদা, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB), এবং কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংকের গ্রাহকরাও সমস্যার মুখে পড়েন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ:
এই বিপর্যয়ের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বহু গ্রাহক। টুইটার (এক্স), ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, রেস্তোরাঁ, দোকান কিংবা অ্যাপ ক্যাবের পেমেন্ট আটকে যাওয়ায় তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে।
একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ডিনারের বিল দুইবার কাটা হয়েছে ইউপিআই-এর গ্লিচের কারণে। একবার ফেল দেখিয়েছে, পরের বার সাকসেসফুল, কিন্তু এখন টাকা আটকে গেছে!”
আরেকজন বলেন, “আমি একজন ক্ষুদ্র বিক্রেতা। ইউপিআই না চলায় আমার বহু বিক্রি বাতিল করতে হয়েছে। এতে বড় ক্ষতি হয়েছে।”
ব্যাংক ও অ্যাপ সংস্থার প্রতিক্রিয়া:
প্রথমে সমস্যার বিষয়ে কেউ স্পষ্ট কিছু না বললেও পরে ফোনপে এবং গুগল পে তাদের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে জানায়, তারা সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতন এবং সমাধানের জন্য কাজ করছে।
স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া একটি বিবৃতি দিয়ে জানায়, “UPI পরিষেবায় সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা NPCI-র সঙ্গে মিলে এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।”
NPCI-এর ভূমিকা:
ইউপিআই সিস্টেম পরিচালনাকারী ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCI) এই সমস্যা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানালেও, অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, সার্ভারের অতিরিক্ত চাপ বা ব্যাকএন্ডে কোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতামত:
ডিজিটাল লেনদেনে মানুষের নির্ভরতা ক্রমেই বাড়ছে, এবং এমন পরিস্থিতি প্রমাণ করে প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার।
অর্থনৈতিক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সৌমিত্র বসু বলেন, “UPI এখন ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এই ধরণের বিপর্যয়, যদিও অস্থায়ী, তা দেখিয়ে দেয় যে আমাদের সার্ভার লোড ব্যালেন্সিং এবং রেজিলিয়েন্সে আরও উন্নতি প্রয়োজন।”
পরবর্তী পদক্ষেপ:
ব্যাংক ও অ্যাপ সংস্থাগুলি জানিয়েছে যে তারা কাজ করে চলেছে এবং ধীরে ধীরে পরিষেবা স্বাভাবিক হচ্ছে। অনেক সংস্থা গ্রাহকদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কাস্টমার কেয়ার ও সহায়তা পরিষেবাও চালু রেখেছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই বিষয়ে নজর রাখছে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। NPCI-র সঙ্গে যৌথভাবে পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতের জন্য আরও নিরাপদ ও নিরবিচারে চলার মতো ব্যবস্থার দিকেও নজর দেওয়া হতে পারে।
এই ইউপিআই পরিষেবা বিপর্যয় ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, ব্যাকআপ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। সরকারের উচিত এখনই এই ধরণের ঘটনা ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদি ও প্রযুক্তিগতভাবে স্থিতিশীল পরিকল্পনা নেওয়া। ডিজিটাল ভারতের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করতে গেলে এমন সমস্যাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঠেকানো অত্যন্ত জরুরি।