বলিউডের ‘বড় বাজেটের’ আগমনে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বাংলা (Tollywood) সিনেমা। প্রাইম টাইমে নিজেদের রাজ্যেই জায়গা পাচ্ছে না বাংলা ভাষার ছবি। আর এই সমস্যার বিরুদ্ধে এবার ঐক্যবদ্ধভাবে গলা তুলল টলিউড। বড় কোনও হিন্দি ছবি এলেই বাংলা ছবিকে সিনেমা হল থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এমনকি ভালো বক্স অফিস পারফরম্যান্স সত্ত্বেও! এই ঘটনার প্রতিবাদে ‘নো শো শেয়ারিং’-এর বিরুদ্ধে একজোট হলেন টলিউড তারকারা ও প্রযোজকেরা।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের (Arup Biswas) সঙ্গে এই সমস্যা নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন অভিনেতা দেব (Dev), অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta), পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Kaushik Ganguly) সহ বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিরা। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন প্রযোজক, ডিস্ট্রিবিউটর এবং এক্সিবিটাররাও। বৈঠক শেষে মন্ত্রী জানান, সমস্যার সমাধান হয়েছে এবং এবার থেকে বাংলার সিনেমা প্রাইম টাইমেই চলবে।
অভিনেতা দেব বলেন, ‘‘আমি ‘টনিক’ মুক্তি দেওয়ার সময়ও এই সমস্যায় পড়েছিলাম। এবার ‘ধূমকেতু’ মুক্তির আগেই আবার সেই পুরনো চিত্র। ’ওয়ার ২’ সিনেমার জন্য বলা হচ্ছে বাংলা হলে সিঙ্গল স্ক্রিনে চারটে শো না দিলে ওরা শো দেবে না। এটা তো অন্যায়। যদি ‘খাদান’-এর মতো ব্লকবাস্টার দেওয়ার পরও এই অপমান পাই, তাহলে নতুন প্রযোজকেরা বাংলা সিনেমায় টাকা ঢালবেন কেন?’’
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘তিনটে-চারটে প্রোডাকশন হাউস নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি চলে না। যারা বাইরে থেকে বাংলায় ছবি প্রযোজনা করতে চাইছেন, তাঁদের যদি হলে শো না মেলে, তাহলে তাঁরা আগ্রহ হারাবেন।’’
পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘‘দর্শকেরাও বারবার অভিযোগ করেন— বাংলা সিনেমা দেখতে হলে প্রেক্ষাগৃহে জায়গা পাওয়া যায় না। এই ভাষার মর্যাদা বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যেই না থাকলে কোথায় থাকবে?’’
বছরের পর বছর ধরে একই ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাংলা সিনেমাকে। ২০২৩ সালে শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ মুক্তির সময় ‘নো শো শেয়ারিং’ নীতির বলি হয় বাংলা ছবিও। এই প্রবণতা যেন আরও জাঁকিয়ে বসছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত মোহতা, নিসপাল সিংহ রানে-সহ প্রথম সারির বহু অভিনেতা-প্রযোজক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কাছে লিখিত আবেদন জানান। এরপরই তৎপর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস টলিউডের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন।
বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, ‘‘চলচ্চিত্র জগতে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ কাজ করেন। নানা সময় নানা সমস্যা আসে, আবার আলোচনার মাধ্যমেই তার সমাধান হয়। বাংলা সিনেমা বাংলার হলে প্রাধান্য পাবে, এটাই সরকারের অবস্থান।’’
সব মিলিয়ে বাংলা সিনেমার অস্তিত্ব রক্ষায় এ যেন নতুন এক ভাষা আন্দোলনের সূচনা। অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক থেকে শুরু করে সরকার— সবাই একত্রে বলছেন, ‘‘বাংলা ছবির মর্যাদা বাংলার মাটিতে রক্ষা করতেই হবে।’’
এই বৈঠকের পরে আশা করা হচ্ছে, বাংলা ছবি আর কোণঠাসা হবে না। প্রাইম টাইমে নিজের রাজ্যে নিজের ভাষার সিনেমাই থাকবে প্রাধান্যে।