ভারতের অন্যতম পুরনো ও বিস্তৃত পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা — ভারতীয় ডাক বিভাগ (Postal Department) — এখন এক নতুন প্রযুক্তিগত যুগে প্রবেশ করছে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের প্রতিটি প্রান্তে নিরলসভাবে কাজ করে চলা এই বিভাগ এখন তার পরিষেবাকে আরও আধুনিক ও নাগরিকবান্ধব করে তুলতে নানা প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনছে।
ডিজিটাল রূপান্তরের পথে ডাক বিভাগ:
সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতীয় ডাক বিভাগ তার আইটি (IT) পরিকাঠামোতে বড়সড় পরিবর্তন আনছে, যার লক্ষ্য হলো গ্রাহকদের আরও সহজ, নিরাপদ এবং দ্রুত পরিষেবা প্রদান করা। এই আধুনিকীকরণ ধাপে ধাপে দেশের বিভিন্ন পোস্ট অফিসে চালু করা হচ্ছে।
নতুন প্রযুক্তির আওতায় প্রায় ৮৬,০০০টি পোস্ট অফিস ইতিমধ্যেই আপগ্রেড হয়ে গিয়েছে। এতে করে গ্রাহকরা ডাক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত নানা সুবিধা আরও স্বচ্ছ ও সময়োপযোগীভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
আধুনিক পোস্ট অফিসে থাকবে UPI পেমেন্ট, OTP ভেরিফিকেশন:
নতুন “অ্যাডভান্সড পোস্টাল টেকনোলজি” (APT) সিস্টেমের অধীনে, পোস্ট অফিসে UPI পেমেন্ট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর ফলে, গ্রাহকরা এখন সহজেই ডিজিটাল মাধ্যমে অর্থ প্রদান করতে পারবেন — বিশেষ করে স্পিড পোস্ট বা পার্সেল বুক করার সময়।
এছাড়াও, ওটিপি-ভিত্তিক ভেরিফিকেশন চালু করা হচ্ছে ডেলিভারির সময়, যাতে প্যাকেট হাতে পাওয়ার নিশ্চিততা নিশ্চিত হয়। এটি শুধুমাত্র নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে না, বরং প্যাকেট হারানোর বা ভুল হাতে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমাবে।
ট্র্যাকিং এবং ডেলিভারি হবে আরও নির্ভুল:
APT সিস্টেমের মাধ্যমে ডাকের ট্র্যাকিং ব্যবস্থাও আরও উন্নত করা হয়েছে। এখন গ্রাহকরা রিয়েল-টাইমে জানতেপারবেন তাদের প্যাকেট বা চিঠি কোন অবস্থানে রয়েছে, এবং কখন তা ডেলিভারি হবে।
নতুন যুগে নতুন পরিচয়: ডিজিপিন:
এক বড় পরিবর্তন হিসেবে ভারতীয় ডাক বিভাগ চালু করেছে “ডিজিপিন” (DigiPIN) পরিষেবা। এটি প্রচলিত পিনকোড ব্যবস্থার পরিবর্তে কাজ করবে। ডিজিপিন একটি ডিজিটাল পিন যা কোনও ঠিকানার নির্ভুল ডিজিটাল পরিচয় প্রদান করবে।
এই ব্যবস্থার ফলে পার্সেল বা চিঠির সঠিক লোকেশন শনাক্ত করা অনেক বেশি নির্ভুল ও সময় সাশ্রয়ী হবে। বিশেষত গ্রামীণ ও দূরবর্তী অঞ্চলে যেখানে ঠিকানা পরিষ্কারভাবে লেখা না থাকলে সমস্যা দেখা যায়, সেখানে ডিজিপিন কার্যকরী ভূমিকা নেবে।
গ্রাহক পরিষেবার মান বৃদ্ধি:
নতুন সিস্টেমে গ্রাহক ইন্টারফেস এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে তা ব্যবহারকারী-বান্ধব হয়। অনলাইন পরিষেবার ক্ষেত্রেও নানা ফিচার যুক্ত হচ্ছে যাতে সাধারণ মানুষ ঘরে বসেই পোস্ট অফিস সংক্রান্ত নানা পরিষেবা পেতে পারেন।
ডাক বিভাগ এখন আর কেবলমাত্র চিঠিপত্র বা পার্সেল পাঠানোর জায়গা নয় — এটি ধীরে ধীরে ডিজিটাল পরিষেবার কেন্দ্র হয়ে উঠছে।
আকাশপথেও পৌঁছাবে চিঠি:
আরও একটি বড়সড় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারতীয় ডাক বিভাগ বর্তমানে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে চুক্তির পরিকল্পনা করছে, যাতে যাত্রীবাহী বিমানের কার্গো হোল্ডে মেল ব্যাগের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা সংরক্ষিত থাকে।
এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দেশজুড়ে চিঠিপত্র ও পার্সেল আরও দ্রুত ও নির্ভরযোগ্যভাবে পাঠানো সম্ভব হবে। বিশেষ করে দূরবর্তী রাজ্য ও অঞ্চলগুলির জন্য এটি এক বড় সুবিধা হবে।
ব্যাঙ্কিং পরিষেবার মতো সুবিধা:
ডাক বিভাগ এখন শুধুমাত্র ডাক পরিষেবায় সীমাবদ্ধ নেই। ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্টস ব্যাঙ্ক (IPPB)-এর মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যাঙ্কিং পরিষেবা যেমন: টাকা জমা, তোলা, স্থানান্তর, ইত্যাদি প্রদান করছে। আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হলে এই পরিষেবারও মান ও গতি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতীয় ডাক বিভাগের এই রূপান্তর নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ডিজিটাল ভারত গড়ার লক্ষ্যে এটি একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে, সাধারণ মানুষের জীবনে আরও সহায়ক ও সহজ সেবা দেওয়ার এই প্রচেষ্টা সফল হলে ডাক বিভাগ নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে, এবং ভারতীয় নাগরিকদের প্রতিদিনের জীবনে আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়বে।