আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন তদন্তের জেরে মুখে কুলুপ,কটাক্ষ রাহুলের

কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ‘অর্থনৈতিক…

Rahul Gandhi alleges modi

কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ‘অর্থনৈতিক ব্ল্যাকমেল’ বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন।

এই পদক্ষেপের ফলে ভারতীয় পণ্যের উপর মোট শুল্ক ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ভারতের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে টেক্সটাইল, গয়না, চামড়া এবং সামুদ্রিক পণ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

   

রাহুল গান্ধী এই শুল্ক বৃদ্ধিকে ভারতকে একটি ‘অন্যায্য বাণিজ্য চুক্তি’র দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ভারতের জনগণের স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।৬ আগস্ট, ২০২৫-এ এক্স প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে রাহুল গান্ধী বলেন, “ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক হল অর্থনৈতিক ব্ল্যাকমেল – ভারতকে একটি অন্যায্য বাণিজ্য চুক্তির দিকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা।

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর দুর্বলতাকে ভারতের জনগণের স্বার্থের উপর প্রাধান্য দিতে দেবেন না।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের কারণে মোদী সরকার এই শুল্ক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে পারছে না। তিনি বলেন, “মোদী ট্রাম্পের বারবার শুল্ক হুমকির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারছেন না, কারণ আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন তদন্ত তাঁর হাত বেঁধে রেখেছে।”

ট্রাম্প ৬ আগস্ট, ২০২৫-এ একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করে ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া আগের ২৫ শতাংশ শুল্কের উপর যোগ হয়েছে। এই নির্বাহী আদেশ, ‘রাশিয়ার সরকার কর্তৃক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি মোকাবিলা’ শিরোনামে, ভারতের রাশিয়া থেকে তেল ক্রয়ের কারণে এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

এই অতিরিক্ত শুল্ক ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বলেছেন, “ভারত আমার বন্ধু, কিন্তু তারা বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে। তারা রাশিয়ার তেল এবং অস্ত্র কিনছে, যখন সবাই চায় রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করুক।” তিনি ভারতের অর্থনীতিকে “মৃত অর্থনীতি” বলেও সমালোচনা করেছেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই শুল্ককে “অন্যায্য, অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য” বলে সমালোচনা করেছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই পথ বেছে নিয়েছে। আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।” মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ভারতের তেল আমদানি জাতীয় স্বার্থ এবং ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তার উপর ভিত্তি করে করা হয়।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ৫০ শতাংশ শুল্ক ভারতের রপ্তানি খাতে বড় ধাক্কা দেবে। টেক্সটাইল, গয়না, চামড়া, এবং সামুদ্রিক পণ্যের মতো খাতগুলো বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আইসিআরএ-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ার বলেন, “এই শুল্ক ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ২০ থেকে ৪০ বেসিস পয়েন্টের ক্ষতি করতে পারে।” তবে, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইলেকট্রনিক্স খাত আপাতত এই শুল্ক থেকে অব্যাহতি পেয়েছে, যা ভারতের রপ্তানির প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের অংশ।

Advertisements

কংগ্রেস নেতা পবন খেরা এই শুল্ককে “অকথ্য ব্ল্যাকমেল” বলে সমালোচনা করে বলেন, “এটা আশ্চর্যজনক যে আমরা এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছি, যেখানে একটি পরাশক্তি আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।” তিনি মোদী সরকারের বিদেশ নীতিকে ব্যর্থ বলে অভিহিত করেন।

এছাড়া, কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেন, “এই শুল্ক আমাদের পণ্যকে আমেরিকায় অপ্রতিযোগী করে তুলবে। আমাদের এখন অন্য বাজার, যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।” তিনি সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির উল্লেখ করে এটিকে একটি স্বল্পমেয়াদী সমাধান হিসেবে দেখছেন।

ভারত এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (বিটিএ) চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যার প্রথম ধাপ এই বছরের শরতে শেষ হওয়ার কথা। আলোচনার পরবর্তী বৈঠক ২৫ আগস্ট নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, “ভারতের উচিত শান্ত থাকা, কমপক্ষে ছয় মাস প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ এড়ানো এবং হুমকির মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা না করা।” তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার তেল ক্রয় বন্ধ করা কেবল তখনই সম্ভব, যদি তা অর্থনৈতিকভাবে সম্ভব হয়।

শিয়ালদহ-রানাঘাট রুটে ছুটবে এসি লোকাল, ভাড়া ও সমস্ত সুবিধার কথা জানাল রেল

এই শুল্ক বৃদ্ধি ভারতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ভারতকে এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এশিয়ার দেশ, এবং মধ্যপ্রাচ্যের বাজারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সম্প্রতি ভারত-ইউকে এফটিএ এবং অস্ট্রেলিয়া ও ইউএই-এর সঙ্গে চুক্তি এই ক্ষতি কিছুটা পূরণ করতে পারে। তবে, ভারতের কূটনৈতিক দক্ষতা এবং বৈচিত্র্যময় বাণিজ্য নীতি এই সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।