তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা দলের নেতৃত্বে বড়সড় পরিবর্তন ঘটে গেল। দলের চিফ হুইপ পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্থানে নতুন দায়িত্বে এলেন বারাসাত কেন্দ্রের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। মঙ্গলবার সংসদ প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কল্যাণ বলেন, “নতুন চিফ হুইপকে আমার তরফে শুভেচ্ছা। আমার থেকে ভালো করবেন বলে আশা করি। যদি আমাকে ইনকম্পিটেন্ট প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে সেটা দলের পক্ষেই ভাল।”
এই মন্তব্যে একদিকে যেমন উঠে এল তাঁর আত্মবিশ্বাস, তেমনই অন্যদিকে লুকিয়ে রইল হতাশার সুর। নিজের অপসারণ প্রসঙ্গে কল্যাণ বলেন, “জীবনে যা ঘটে, তা ভালর জন্যই ঘটে। ভগবান যা করেন, ভালর জন্যই করেন।” এরপর তিনি আদালতের কাজের কথা বলে সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত বিদায় জানান।
সূত্রের খবর, সোমবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের লোকসভা সাংসদদের নিয়ে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। সেখানেই তিনি লোকসভায় দলের প্রতিনিধিত্ব এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সূত্র বলছে, বৈঠকে কয়েকজন সাংসদের অনুপস্থিতি, দলীয় অবস্থান স্পষ্ট না হওয়া এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকার অভাব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেত্রী। এই বৈঠকের পরই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর থেকে ভরসা তুলে নেয় দল।
চিফ হুইপ পদ থেকে ইস্তফা দেন কল্যাণ। দল সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণও করে নেয়। তার ঠিক পরদিনই তাঁর জায়গায় দায়িত্ব পান ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, কাকলি ঘোষ দস্তিদারের সাংগঠনিক দক্ষতা, দলের প্রতি নিষ্ঠা এবং দিল্লিতে দলের অবস্থান বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাঁর অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তাঁকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক মহলে এই পরিবর্তনকে ঘিরে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। অনেকের মতে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় দল অনেকটাই চাপে। বিজেপি-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলির আগ্রাসী ভূমিকা, সংসদের গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলিতে তৃণমূলের অবস্থান এবং সাংসদদের ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সেই প্রেক্ষিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বে বদলের পথে হাঁটলেন বলে ধারণা।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে লোকসভায় তৃণমূলের মুখ ছিলেন। তাঁর বাগ্মিতা এবং সংসদে সপ্রতিভ উপস্থিতি দলকে বহুবার সাহায্য করেছে। তবে সাম্প্রতিক অতীতে, বিশেষ করে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে, তাঁর ভূমিকা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছিল। এমনকি শোনা যায়, সাংগঠনিক রূপরেখা নিয়ে দলের নির্দেশ মানতে গড়িমসি করছেন তিনি।
এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস স্পষ্ট বার্তা দিল, যে দলীয় শৃঙ্খলা এবং সাংসদদের কার্যকারিতা নিয়ে কোনওরকম আপস করা হবে না। আগামী দিনে সংসদে দলের অবস্থান আরও শক্ত করতে চাইছে তৃণমূল। আর তার জন্য প্রয়োজন কার্যকর নেতৃত্ব। কাকলি ঘোষ দস্তিদারের কাঁধে সেই গুরুদায়িত্ব তুলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই পালাবদলের মধ্যে দিয়ে লোকসভায় তৃণমূলের ভবিষ্যৎ রণকৌশল কীভাবে রূপ পায়, তা এখন দেখার বিষয়। তবে এটা স্পষ্ট, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং পরবর্তী রাজ্য রাজনীতি মাথায় রেখেই দল এখন থেকেই সংসদীয় দলকে ঢেলে সাজাতে চাইছে।