আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক বন্ধ হলে ভারতীয় অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব পড়তে পারে(US Trade), কারণ আমেরিকা ভারতের বৃহত্তম রফতানি বাজার। ২০২৪ সালে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৯০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ভারতের রফতানি ছিল ৮৭ বিলিয়ন ডলার।
এই বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন হলে ভারতের অর্থনীতি, বিশেষ করে টেক্সটাইল, গয়না, অটো পার্টস, এবং সামুদ্রিক পণ্যের মতো খাতগুলো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের পরিস্থিতি ভারতের জিডিপি-তে ০.২ থেকে ০.৪ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি করতে পারে।
এছাড়া, শেয়ার বাজারে অস্থিরতা বাড়তে পারে, যেমনটি সম্প্রতি ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার পর নিফটি ৫০ এবং বিএসই সেনসেক্স সূচকে ০.৯ শতাংশ পতন দেখা গেছে। ভারতীয় মুদ্রার মূল্যও ৮৭.৫৯৫০-এ নেমে পাঁচ মাসের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।
আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হলে ভারতের রফতানি বাজারে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস খাত, যা ভারতের রফতানির একটি বড় অংশ, আমেরিকার বাজারের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এছাড়া, সামুদ্রিক পণ্য এবং অটোমোবাইল পার্টসের রফতানিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমেরিকান ক্রেতারা ইতিমধ্যেই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করতে শুরু করেছে, যা ভারতীয় রফতানিকারকদের জন্য উদ্বেগের কারণ। এছাড়া, ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাত, যা আমেরিকার বাজারের উপর নির্ভর করে, উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য ভারতকে নতুন বাজার খুঁজতে হবে, যা স্বল্প সময়ে কঠিন।
তবে, ভারত এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিকল্প বাণিজ্য চুক্তির দিকে মনোযোগ দিতে পারে। সম্প্রতি ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা বার্ষিক ৫০০ বিলিয়ন বাণিজ্য তৈরী করতে পারে এবং অর্থনীতিতে ০.০৬ শতাংশ অবদান রাখতে পারে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এই চুক্তি ভারতের টেক্সটাইল, গয়না, এবং কৃষি পণ্যের রফতানি বাড়াতে সহায়ক হবে।
এছাড়া, ভারত অস্ট্রেলিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর সঙ্গে ইতিমধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা আমেরিকার বাজারের ক্ষতি কিছুটা পূরণ করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ভারতের কৃষি এবং খনিজ পণ্য রফতানির জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যখন ইউএই-এর সঙ্গে চুক্তি তেল এবং পেট্রোকেমিক্যাল খাতে সহযোগিতা বাড়িয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভারতের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার হতে পারে। ইইউ-এর সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ভারতের ইলেকট্রনিক্স, ফার্মাসিউটিক্যালস, এবং সেবা খাতের রফতানি বাড়াতে পারে। এশিয়ার দেশগুলোর (যেমন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড) সঙ্গেও ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে পারে।
এশিয়া অঞ্চল ভারতের ইলেকট্রনিক্স এবং টেক্সটাইল রপ্তানির জন্য একটি সম্ভাবনাময় বাজার। এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, বিশেষ করে সৌদি আরব এবং কাতার, তেল এবং গ্যাস আমদানির পাশাপাশি ভারতীয় পণ্যের জন্য নতুন বাজার হিসেবে উঠে আসতে পারে।
বাংলাদেশের সঙ্গেও ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। প্রস্তাবিত বাংলাদেশ-ভারত সেপা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ভারতের রফতানি ১৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা জিডিপিতে ০.০৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আনতে পারে। এই চুক্তি পণ্য বাণিজ্যের পাশাপাশি সেবা, মেধাস্বত্ব, এবং ই-কমার্স খাতে সহযোগিতা বাড়াবে। তবে, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে অশুল্ক বাধা (যেমন, অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি, গুণগত মান সার্টিফিকেশন) দূর করা প্রয়োজন।
ভারতের জন্য আরেকটি সম্ভাবনা হল জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি জোরদার করা। জাপানের সঙ্গে ইতিমধ্যে একটি ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) রয়েছে, যা আরও প্রসারিত করা যেতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ইলেকট্রনিক্স এবং অটোমোবাইল খাতে নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে।
এছাড়া, আফ্রিকার দেশগুলো, বিশেষ করে নাইজেরিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কৃষি পণ্যের জন্য সম্ভাবনাময় বাজার হতে পারে।অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন হলে ভারতকে বৈচিত্র্যময় বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করতে হবে।
একটি দেশের উপর অতিনির্ভরতা কমিয়ে ইইউ, আসিয়ান, এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা জরুরি। এছাড়া, রাশিয়ার তেল আমদানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার দেশগুলো থেকে তেল আমদানি বাড়ানো যেতে পারে। ভারতের কূটনৈতিক দক্ষতা এবং উদার বাণিজ্য নীতি এই সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মিগুয়েলের হ্যাটট্রিকের সুযোগ হাতছাড়ায় প্রথমার্ধ গোলশূন্য ইস্টবেঙ্গল-নামধারী ম্যাচ
আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হলে ভারতের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, তবে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউএই, ইইউ, আসিয়ান, এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি এই ক্ষতি কিছুটা পূরণ করতে পারে। ভারতকে এখন বৈচিত্র্যময় বাণিজ্য অংশীদার খুঁজে বের করতে হবে এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে হবে।