মুখ্যমন্ত্রীর ঝাড়গ্রাম সফরে কটাক্ষ করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Mamata)। নবান্ন অভিযানে ভয় পেয়ে নাকি তিনি ঝাড়গ্রাম পালিয়েছেন। এদিকে ঝাড়গ্রাম থেকে নিজস্ব ভঙ্গিতে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঝাড়গ্রামের জনসভায় কেন্দ্রের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির উপর যদি কেউ আক্রমণ করে, তবে আমি বিজেপির মুখোশ খুলে বিশ্বের সামনে তাদের প্রকৃত চেহারা তুলে ধরব।”
বুধবার ঝাড়গ্রামের জনসভায় এই মন্তব্য করে তিনি রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এনেছেন নতুন মাত্রা। এই সভায় মমতা বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলার সংস্কৃতি ও পরিচয়ের উপর আক্রমণের অভিযোগ তুলে তীব্র কটাক্ষ করেন।মমতা বলেন, “বাংলা আমাদের গর্ব, আমাদের পরিচয়। বাংলা ভাষা, আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উপর আঘাত হানার চেষ্টা করছে বিজেপি।
তারা বাংলার মানুষকে বিভক্ত করতে চায়। কিন্তু আমি বলছি, এই মাটির মানুষ তাদের ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করবে না। যদি তারা বাংলা ভাষা ও বাঙালির উপর আক্রমণ চালায়, তবে আমি বিশ্বের সামনে বিজেপির প্রকৃত রূপ তুলে ধরব।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিজেপি রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ করে বাংলাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
ঝাড়গ্রামের এই সভায় মমতা বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ভাষার প্রতি গর্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “বাংলা ভাষা শুধু একটি ভাষা নয়, এটি আমাদের আত্মার অংশ। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা আজও আমাদের প্রেরণা দেয়। এই ভাষাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা কখনও সফল হবে না।” তিনি বিজেপির উপর বাংলার সংস্কৃতির প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের অভিযোগ তুলে বলেন, “তারা বাংলার মানুষকে হিন্দি বা অন্য ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
কিন্তু আমরা আমাদের মাতৃভাষার জন্য লড়াই করব।”মমতার এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘রাজনৈতিক প্ররোচনা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
বিজেপি বাংলা ভাষা বা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে নয়। আমরা বাংলার উন্নয়ন চাই, কিন্তু তৃণমূলের দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।” তিনি আরও বলেন, মমতা এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছেন।ঝাড়গ্রামের সভায় মমতা শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণই করেননি, বরং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমরা ঝাড়গ্রামে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছি। কিন্তু কেন্দ্র সরকার আমাদের তহবিল দিচ্ছে না। তারা বাংলার মানুষের প্রতি বৈষম্য করছে।” তিনি জানান, রাজ্য সরকার স্থানীয় জনজাতি সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ প্রকল্প চালু করেছে এবং তাদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।এই সভায় মমতা অভয়া কাণ্ডের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “অভয়ার ঘটনায় আমরা ন্যায়বিচারের জন্য লড়ছি। কিন্তু বিজেপি এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। তারা শুধু মিথ্যা প্রচার করছে।” তিনি দাবি করেন, তৃণমূল সরকার অভয়ার পরিবারের পাশে রয়েছে এবং এই ঘটনার তদন্তে কোনও ত্রুটি রাখা হবে না।মমতার এই বক্তব্য বাংলার রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এর পাল্টা জবাবে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষের সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে এই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে বিজেপির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।” তিনি আরও বলেন, বাংলার মানুষ এই ধরনের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হবে না।
‘আপনি আগে জন্মের শংসাপত্র দেখান’, NRC-র বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি, শাহকে বিঁধলেন মমতা
এই ঘটনা বাংলার রাজনীতিতে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে চলমান সংঘাতকে আরও তীব্র করেছে। মমতার এই হুঁশিয়ারি আগামী দিনে রাজনৈতিক সমীকরণে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে। তৃণমূলের সমর্থকরা মমতার এই বক্তব্যকে বাংলার অধিকার রক্ষার লড়াই হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে বিজেপি এটিকে রাজনৈতিক নাটক বলে সমালোচনা করছে।