দিল্লির অতি সুরক্ষিত চাণক্যপুরী এলাকায় তামিলনাড়ুর রাজ্যসভার সাংসদ আর সুধার গলার সোনার চেন ছিনতাই হয় (Robbery)। সুরক্ষিত এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। ঘটনায় দিল্লি পুলিশ বুধবার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্তের নাম সোহান রাওয়াত, যিনি একজন কুখ্যাত অপরাধী।
তার বিরুদ্ধে দিল্লির বিভিন্ন থানায় ছিনতাই ও চুরি সংক্রান্ত ২৬টি মামলা রয়েছে। জয়েন্ট কমিশনার অফ পুলিশ (জয়েন্ট সিপি) দীপক গুপ্তা জানিয়েছেন, “সোহান রাওয়াত নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি একজন পুনরাবৃত্ত অপরাধী। আমরা তাকে দক্ষিণ জেলা থেকে গ্রেফতার করেছি। তার বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা রয়েছে। আমরা প্রযুক্তিগত এবং মানবিক গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে তাকে ধরতে সক্ষম হয়েছি।”
ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার সকালে, যখন কংগ্রেসের সাংসদ আর সুধা চাণক্যপুরীর তামিলনাড়ু ভবনের কাছে পোল্যান্ড দূতাবাসের সামনে সকালের হাঁটার সময় ছিলেন। এক মোটরসাইকেল আরোহী তাঁর গলার ৩০.৯০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের চেন ছিনিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় সাংসদ সামান্য আঘাত পান।
দিল্লি পুলিশের নিউ দিল্লি জেলা এবং দক্ষিণ দিল্লি জেলার যৌথ টিম এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে এবং অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় পুলিশ চুরি যাওয়া সোনার চেন, অপরাধে ব্যবহৃত স্কুটার, আরও একটি চুরি হওয়া দুই চাকার যান, চারটি মোবাইল ফোন (যা চুরি বলে সন্দেহ করা হচ্ছে), অভিযুক্তের পরিহিত পোশাক, হেলমেট এবং চটি উদ্ধার করেছে।
জয়েন্ট সিপি দীপক গুপ্তা জানান, অভিযুক্ত সোহান রাওয়াত ওরফে সোনু ওরফে বুগ্গু (২৪) দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির ওখলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার হরকেশ নগরের বাসিন্দা। তিনি গত ২৭ জুন, ২০২৫-এ জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন, যখন তিনি আম্বেদকর নগরে একটি যানবাহন চুরির মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন।
জামিনে মুক্তির মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তিনি আবার এই অপরাধ করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, সোহানের বিরুদ্ধে হাউজ খাস, কালকাজি, সানলাইট কলোনি, আরকে পুরম, নারায়ণা, সাকেত সহ দিল্লির বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।
তদন্তে পুলিশ ২৪টি টিম গঠন করেছিল, যার মধ্যে নিউ দিল্লি জেলা পুলিশ, ক্রাইম ব্রাঞ্চ, স্পেশাল সেল এবং স্পেশাল স্টাফের সদস্যরা ছিলেন। তারা ১,৫০০টিরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে এবং ২০০ জনেরও বেশি লোকের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, অভিযুক্ত একটি রঙিন ফুল-স্লিভ টি-শার্ট এবং হেলমেট পরে কালো স্কুটারে দ্রুত গতিতে ছিনতাইয়ের আগে ও পরে মোতি বাগ এলাকার দিকে পালিয়ে যাচ্ছেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের অ্যান্টি-অটো থেফট স্কোয়াড (এএটিএস) ওখলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোহানকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, সোহান বর্তমানে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হচ্ছেন, যাতে তার সম্পৃক্ততা অন্যান্য সাম্প্রতিক ছিনতাই এবং যানবাহন চুরির ঘটনায় নিশ্চিত করা যায়। দিল্লি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নিউ দিল্লি জেলায় ছিনতাই-সংক্রান্ত পিসিআর কল ৪৮ শতাংশ কমেছে, যা তাদের কার্যকারিতার ইঙ্গিত দেয়।
এই ঘটনা দিল্লির উচ্চ নিরাপত্তা অঞ্চলে অপরাধের উদ্বেগজনক প্রকৃতি তুলে ধরেছে। একজন সাংসদের উপর এই ধরনের হামলা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার প্রশ্ন তুলেছে। তবে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ এবং প্রযুক্তিগত ও মানবিক গোয়েন্দা তথ্যের ব্যবহার এই মামলার সমাধানে সফলতা এনেছে।
সিএবি সিংহাসনের লড়াইয়ের ‘মহারাজে’র প্রতিপক্ষ কে?
রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা চলছে, এবং বিরোধী দলগুলো দিল্লির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে পুলিশের দাবি, তারা এই ধরনের অপরাধ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।এই গ্রেফতারি দিল্লি পুলিশের তৎপরতা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রমাণ। আগামী দিনে সোহানের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে আরও তথ্য প্রকাশ পেলে এই ধরনের অপরাধের জাল আরও উন্মোচিত হতে পারে।