প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা (PMJDY) ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সারা দেশে একটি বৃহৎ রি-কেওয়াইসি (Re-KYC) অভিযান শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচি জুলাই ১ থেকে শুরু হয়ে চলবে সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫ পর্যন্ত। দেশের সমস্ত রাজ্যে বিশেষ করে গ্রামীণ ও অবাঙ্কিত জনগোষ্ঠীর কাছে আর্থিক পরিষেবার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) এবং বিভিন্ন পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রধান উদ্দেশ্য হল জন-ধন অ্যাকাউন্টধারীদের কেওয়াইসি (KYC) হালনাগাদ করা, যাতে তারা ভবিষ্যতেও ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ও সরকারী সুবিধা নির্বিঘ্নে পেতে পারেন।
রি-কেওয়াইসি কেন জরুরি?
রি-কেওয়াইসি বা পিরিয়ডিক আপডেশন অফ কেওয়াইসি হল একটি বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়া, যেখানে অ্যাকাউন্টধারীদের তাদের পরিচয় এবং ঠিকানা সম্পর্কিত তথ্য ব্যাঙ্কে পুনরায় জমা দিতে হয়। প্রতিটি অ্যাকাউন্ট খুলে ১০ বছর অতিক্রম করলে রি-কেওয়াইসি বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকের আপডেটেড তথ্য পায় এবং মানি লন্ডারিং বা জালিয়াতি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
রি-কেওয়াইসি না করলে অ্যাকাউন্টে লেনদেন সীমিত বা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই গ্রাহকদের যত দ্রুত সম্ভব এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও আরবিআই-এর বার্তা:
২ আগস্ট ২০২৫, জন-ধন যোজনার দশম বার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “জন-ধন যোজনার মাধ্যমে সারা দেশে ৫৫ কোটির বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এই স্কিমের ১০ বছর পূর্তিতে রি-কেওয়াইসি অভিযানে অংশগ্রহণ করা খুবই জরুরি। ব্যাঙ্কগুলি এক লক্ষেরও বেশি পঞ্চায়েতে ক্যাম্প চালু করেছে। আমি সব জন-ধন অ্যাকাউন্টধারীকে অনুরোধ করছি যেন তারা শীঘ্রই রি-কেওয়াইসি সম্পন্ন করেন।”
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা বলেন, “অনেক জন-ধন অ্যাকাউন্ট রি-কেরিসির জন্য নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে গেছে। তাই ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পরিষেবা পৌঁছে দিতে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ক্যাম্প করছে। কেবল রি-কেওয়াইসি নয়, ক্যাম্পগুলিতে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা, মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স ও পেনশন স্কিম সম্পর্কিত সচেতনতা ও পরিষেবা দেওয়াও চলছে।”
জন-ধন যোজনা: এক নজরে:
২০১৪ সালের আগস্ট মাসে শুরু হওয়া এই স্কিমটির লক্ষ্য ছিল প্রতিটি পরিবারে অন্তত একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পৌঁছে দেওয়া। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এই প্রকল্পের অধীনে গ্রাহকরা
নিম্নলিখিত সুবিধা পান:
শূন্য ব্যালেন্সে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা যায়
আমানতের উপর সুদ
রূপে ডেবিট কার্ড এবং দুর্ঘটনা বিমা কভার
১০,০০০ টাকা পর্যন্ত ওভারড্রাফট সুবিধা
ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (DBT) এর মাধ্যমে সরকারি ভাতা সরাসরি অ্যাকাউন্টে জমা
গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ব্যাপক ক্যাম্প:
এই মুহূর্তে দেশের এক লক্ষেরও বেশি পঞ্চায়েতে রি-কেরিসি ক্যাম্প চলছে। গ্রাহকরা আধার কার্ড, ঠিকানা প্রমাণপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে কেওয়াইসি আপডেট করতে পারছেন। অনেক ব্যাঙ্ক মোবাইল ইউনিট বা ভ্রাম্যমাণ ব্যাঙ্কিং ভ্যানের মাধ্যমেও পরিষেবা দিচ্ছে।
বিশেষ করে যেসব এলাকায় ব্যাঙ্ক শাখা নেই বা খুব দূরে, সেসব জায়গায় এই ক্যাম্পগুলির মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পরিষেবা পৌঁছানো হচ্ছে।
মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স ও পেনশন স্কিম:
রিকেওয়াইসি ক্যাম্পগুলিতে শুধু কেওয়াইসি নয়, গ্রাহকদের মাইক্রো বিমা (Pradhan Mantri Jeevan Jyoti Bima Yojana, Suraksha Bima Yojana) ও পেনশন স্কিম (Atal Pension Yojana)-এর আওতায় নিয়ে আসারও চেষ্টা চলছে। এছাড়াও, গ্রাহকের অভিযোগ বা সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
গ্রাহকদের উদ্দেশে বার্তা:
সকল জন-ধন অ্যাকাউন্টধারীদের প্রতি বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রি-কেওয়াইসি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এর মাধ্যমে তারা তাদের অ্যাকাউন্ট সচল রাখতে পারবেন এবং ভবিষ্যতের সমস্ত সরকারি সুবিধা পেতে কোনও বাধা থাকবে না।
জন-ধন যোজনার ১০ বছর পূর্তিতে এই রি-কেওয়াইসি অভিযান ভারতের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল। ব্যাঙ্ক ও সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গ্রামীণ ভারতে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা আরও সহজলভ্য হচ্ছে। এখন সময় সকল গ্রাহকের সক্রিয় অংশগ্রহণের।