নয়াদিল্লি: দেশের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য বড় ধাক্কা অপেক্ষা করছে। বিদ্যুৎ বিলে বাড়তি বোঝা চাপতে চলেছে আগামী দিনে (Electricity bill increase India)। কারণ, দেশের সর্বোচ্চ আদালত বুধবার এক ঐতিহাসিক নির্দেশে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে জানিয়ে দিল, বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলির (DisComs) প্রাপ্য বহু বছরের বকেয়া “রেগুলেটরি অ্যাসেট” আগামী চার বছরের মধ্যে মিটিয়ে ফেলতে হবে। এই বকেয়ার পরিমাণ পেরিয়ে গিয়েছে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা।
এই নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি পিএস নারসিমহা ও অতুল এস চন্দুরকরের ডিভিশন বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক কমিশনগুলিকে (SERCs) এখন একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে এই বকেয়া আদায়ের জন্য। সেইসঙ্গে গোটা প্রক্রিয়ার উপর নজরদারি চালাবে অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল ফর ইলেকট্রিসিটি (APTEL)।
রেগুলেটরি অ্যাসেট কী? কেন এত বিশাল বকেয়া?
রেগুলেটরি অ্যাসেট হল সেই আর্থিক ঘাটতি, যা বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলি ভোগ করে যখন তাদের আসল খরচ ও রাজ্য কমিশনের দ্বারা নির্ধারিত কম ট্যারিফের মধ্যে তফাৎ তৈরি হয়। অনেক সময় রাজনৈতিক কারণে বিদ্যুৎমূল্য কমিয়ে রাখা হয়, অথচ সেই ঘাটতি DisCom-এর পাওনা হিসেবেই জমতে থাকে। ফলে সেই বকেয়ার উপর সুদও বসে, যা ক্রমে বিশাল আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
“রেগুলেটরি ব্যর্থতা”র অভিযোগ
সুপ্রিম কোর্ট এদিন কড়া ভাষায় SERC ও APTEL—দুই সংস্থার ভূমিকাকেই কাঠগড়ায় তোলে। বেঞ্চ জানায়, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে রেগুলেটরি অ্যাসেট বেড়ে চলেছে, যা শেষ পর্যন্ত গ্রাহকের ঘাড়েই বাড়তি বোঝা চাপায়। কমিশনের অদক্ষতা ও রাজনৈতিক নির্দেশে চলার সংস্কৃতি রেগুলেটরি ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’’
গ্রাহকদের উপর কতটা প্রভাব পড়বে?
যদিও এই নির্দেশে শীঘ্রই বিদ্যুৎবিলে দুগুণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই, তবে আগামী চার বছরে ধাপে ধাপে গ্রাহক স্তরে ট্যারিফ বাড়ানো হবে—এ কথা সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণেই স্পষ্ট। একজন মামলাকারী আইনজীবী জানিয়েছেন, ‘‘এই অর্থনৈতিক টাইম বম্ব যেকোনও মুহূর্তে ফেটে যেতে পারত। এখন অন্তত চার বছরে তা ধাপে ধাপে মেটানো যাবে।’’ তিনি আরও বলেন, বাড়তি খরচ গড়ে ভাগ করে দেওয়া হবে—গৃহস্থালি, বাণিজ্যিক ও শিল্প—সব স্তরের গ্রাহকদের উপরই।
রাজ্যগুলিকে রোডম্যাপ দাখিলের নির্দেশ
সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত রাজ্য বিদ্যুৎ কমিশনকে রেগুলেটরি অ্যাসেট মেটানোর একটি সময়বদ্ধ রোডম্যাপ তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। সেইসঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে এই অ্যাসেট নির্ধারিত সীমার বাইরে না যায়, সেদিকেও নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে ট্যারিফের সঙ্গে রেগুলেটরি অ্যাসেট-এর সংযুক্তিকরণও ডি-লিঙ্ক করার কথা ভাবতে হবে।
সারা দেশে নজিরবিহীন ঝাঁকুনি
এই মামলাটি শুরু হয়েছিল দিল্লির বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির আবেদনের মাধ্যমে, তবে সুপ্রিম কোর্ট পরে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে তাতে অন্তর্ভুক্ত করে। দিল্লির টাটা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের পক্ষে আইনজীবী শ্রীরাম বেঙ্কটেশ বলেন, ‘‘রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই এত বছর ধরে বকেয়া বেড়ে গিয়েছে। এখন আদালতের নির্দেশে অন্তত কাঠামোগত সমাধানের পথে হাঁটা সম্ভব হবে।’’
এই রায় দেশের বিদ্যুৎ খাতে একটি গভীর আর্থিক ও নীতিগত চ্যালেঞ্জের দিকেই আঙুল তোলে। আপাতত গ্রাহকদের কিছুটা বেশি বিল মেনে নিতে হবে—তবে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে হয়তো আরও বড় বিপর্যয় এড়ানো গেল।