সামাজিক মাধ্যমে নিজের উষ্ণ ছবি দিয়ে দর্শকদের শিহরিত করেছেন বারবার-সেই অহমিয়া অভিনেত্রী আঙুরলতা ডেকা এবার নারী সুরক্ষার আধিকারিক হয়ে কাজ করবেন। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে আঙুরলতার নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক (Angoorlata Deka appointed Chairperson of the Assam State Commission for Women)। তবে সরকার নীরব।
আঙুরলতা ডেকা অসম রাজ্য মহিলা আয়োগের চেয়ারপার্সন হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রনোজ পেগু তাঁর সরকারি এক্স (X) হ্যান্ডেল থেকে এই ঘোষণা করেন এবং অঙ্গুরলতা ডেকা-কে অভিনন্দন জানান।
উল্লেখ্য বিজেপি শাসিত রাজ্য অসমের বিস্তীর্ণ অংশে বাংলদেশি জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ ঘিরে চরম বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। অভিযোগ, বিজেপি শাসনে অসমবাসী মুসলমিদের জবরদখলকারী চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দলীয় বিধায়ক মডেল-অভিনেত্রী আঙুরলতা ডেকা-কে রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া এক চমক।
অসম সরকার ৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে আঙুরলতা ডেকাকে অসম রাজ্য মহিলা আয়োগ (ASCW)‑এর চেয়ারপার্সন হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ দেয়। তার মেয়াদ তিন বছরের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, যা ৪ আগস্ট ২০২৫ থেকে গন্য হবে। তিনি কমিশনের নেতৃত্বে নারী অধিকার সুরক্ষা, অভিযোগ সমাধান তদারকি, বিভিন্ন আইন কার্যকরকরণে সুপারিশ জানানো এবং সচেতনতা মূলক কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করবেন।একই সময়ে দু’জন নতুন সদস্য কবিতা শইকীয়া ও নিলিমা ব্রহ্মা সংযুক্ত হয়েছেন, যাদের মেয়াদও তিন বছরের জন্য নিদিষ্ট করা হয়েছে।
আঙুরলতা ডেকার জন্ম ১৯৮৬ সালে।তিনি ২০০৬ সালে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্ন বছর “আমি অসমীয়া” দিয়ে অভিনেত্রী হিসেবে নামকরণ করেন। এর পর বেশ কয়েকটি অসমীয়া ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৫ সালে বিজেপিতে যোগ দেন এবং ২০১৬ সালে বটদ্ৰবা বিধানসভা আসনে জয় লাভ করেন। ২০১৯ সালে তাঁকে শ্ৰীমন্ত শংকৰদেৱ কলাক্ষেত্রর পদাধিকারী করা হয়। ২০২৩ সালে তিনি রাজ্য বিজেপি মহিলা মোর্চার সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন।
অসমের সংবাদ মাধ্যমে বারবার আঙুরলতা ডেকার নামের সঙ্গে একাধিক বিতর্ক প্রকাশিত হয়।
১. চোরাচালান অর্থের অভিযোগ
২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তিনি বটদ্ৰব বিধানসভা কেন্দ্রার বিধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ক্ষমতাসীন অবস্থায় রাজ্যের শিক্ষাগত সংস্থার অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ প্রায় ২ কোটি টাকা – তাতে অনিয়ম ও গায়েব নিয়ে অভিযোগ ওঠে। বিদ্যালয়গুলোর কাছেই সেই টাকা পৌঁছায়নি বলে দাবি করা হয় এবং তাঁকে ও তাঁর অভিনেতা স্বামীকে এর সাথে জড়িত বলে জনমত গড়ে উঠেছিল।
২. দাঁতের চিকিৎসকদের অবমাননাকর মন্তব্য এবং FIR
২০২১ সালে তিনি ডেন্টাল কমিউনিটির বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা না চাওয়ায় বিভিন্ন জেলার ডেন্টিস্টদের পক্ষ থেকে FIR দায়ের করা হয়।
৩. CAA বিরোধীদের “Drama” আখ্যায়ন
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA)–এর বিরোধিতা নিয়ে আসামের মানুষ যাতে উন্নয়ন কামনা করে বলে মন্তব্য করেন এবং প্রতিবাদকে ‘ড্রামা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এ মন্তব্য নিয়ে বিভিন্ন ছাত্র ও সামাজিক সংগঠনের সমালোচনা সহ প্রতিবাদ হয়েছিল।
৪. অশালীন ও অবমাননাকর মন্তব্যের মামলা (BPF নেতার বিরুদ্ধে)
২০২০-তে Bodoland People’s Front (BPF) নেত্রী কামল শিং নৰজারিৰ বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, যিনি অঙ্গুরলতা ডেকাকে “sex worker” আখ্যায়িত করেন এমন মন্তব্যের জন্য। এই মন্তব্যে তিনি Sections 294, 500 ও 509 (IPC)-এর আওতায় অভিযোগের মুখে পড়েন ।
৫. সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও অপপ্রচার
২০১৬ সালে অঙ্গুরলতা নিজের নামে ভুয়া Twitter অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, যেখানে অশ্লীল ও বিতর্কিত পোস্ট প্রচার করা হয়েছিল। এ নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন
৬. রাম গোপাল ভার্মার “sexist” মন্তব্য
সিনেমা পরিচালক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, “If MLA can look like this achche din aa gaye hain.” এর ফলে অঙুরলতা ব্যক্তিগতভাবে ও রাজনৈতিকভাবে টার্গেট হন। জনসাধারণ ও নারী অধিকার কর্মীরা তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।