আন্তর্জাতিক কূটনীতির জটিল মেরুকরণে ভারত তার ‘স্ট্র্যাটেজিক অটোনমি’-র পথেই অটল। সেই নীতিরই পরবর্তী ধাপে মঙ্গলবার রাশিয়া পৌঁছলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল (Ajit Doval in Moscow)। তাঁর এই সফরের মূল লক্ষ্য- রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও ভূ-রাজনৈতিক সমঝোতা আরও সুদৃঢ় করা।
এই সফর এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন ভারত-রাশিয়া তেল বাণিজ্য নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানিয়েছে আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতকে কটাক্ষ করে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নিয়েও রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল তেল কেনা ভারতের উচিত হয়নি। এমনকি ভারতের পণ্যের উপর নতুন করে আমদানি শুল্ক চাপানোর হুমকিও দেন তিনি।
আমেরিকার সমালোচনার জবাবে দৃঢ় দিল্লি
সোমবার, ডোভালের সফরের ঠিক আগেই পররাষ্ট্র মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে কোনও ‘নৈতিক দ্বন্দ্ব’ নেই। বরং পশ্চিমা দেশগুলিই অতীতে একই রকমভাবে রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনে যুক্ত ছিল এবং এখনও অনেকেই তা বজায় রেখেছে। ভারতের অবস্থানকে ‘যৌক্তিক ও দায়িত্বশীল’ বলে উল্লেখ করে মন্ত্রক জানায়, “এই প্রশ্নে অন্য দেশের মূল্যায়ন গ্রহণযোগ্য নয়।”
সু-৫৭, এস-৪০০ ও প্রতিরক্ষা উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগে জোর
রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা TASS-এর সূত্র অনুযায়ী, ডোভালের সফরে প্রতিরক্ষা শিল্পে গভীর সহযোগিতা হতে পারে আলোচনার কেন্দ্রে। সম্ভাব্য বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে—
- অতিরিক্ত S-400 ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারির ক্রয়
- Su-57 স্টেলথ ফাইটার জেট অধিগ্রহণের সম্ভাবনা
- ভারতে রুশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের সার্ভিস ও মেন্টেন্যান্স পরিকাঠামো গড়ে তোলা
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের ‘স্থানীয়ীকরণ’ এবং স্বদেশে উৎপাদনের রূপরেখা।
চলতি মাসেই রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন এস. জয়শঙ্কর
বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করও ২৭ ও ২৮ অগাস্ট রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন। তিনি রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আলোচনা করবেন। পাশাপাশি রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি বোরিসভের সঙ্গে যৌথ ভারত-রাশিয়া প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন তিনি।
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য অনুযায়ী, “ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত বোঝাপড়ার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। এটি কোনও তৃতীয় দেশের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে না।”
স্বাধীন কূটনীতির বার্তা
ডোভালের সফর শুধু প্রতিরক্ষা বা জ্বালানির অঙ্ক নয়—এটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের কূটনৈতিক স্বাধীনতার এক বলিষ্ঠ বার্তা। যখন বিশ্বজুড়ে মেরুকরণ প্রবণতা তীব্র হচ্ছে, তখন ভারত স্পষ্ট করে দিচ্ছে—তার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারিত হবে কেবল ‘জাতীয় স্বার্থ’কে কেন্দ্রে রেখেই।