মধ্যপ্রদেশের সিহোর জেলার কুবরেশ্বর ধাম মন্দিরে মঙ্গলবার (Kubereshwar Dham) দুপুরে ভারী ভিড়ের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নারীর মৃত্যু হয়েছে এবং তিনজন আহত হয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাওড় যাত্রার প্রাক্কালে এবং পণ্ডিত প্রদীপ মিশ্রের ‘রুদ্রাক্ষ বিতরণ’ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বিপুল সংখ্যক ভক্তের সমাগমের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনা কুবরেশ্বর ধামের জনপ্রিয়তা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যর্থতার উপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে দুপুর ১২টার দিকে, যখন হাজার হাজার ভক্ত কুবরেশ্বর ধামে কাওড় যাত্রার জন্য জড়ো হয়েছিলেন। এই যাত্রা বুধবার (৬ আগস্ট) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, তার আগের দিনই বিপুল সংখ্যক ভক্ত মন্দির প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মন্দিরের প্রবেশপথে ভিড়ের চাপে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়, যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এই ঘটনায় দুজন নারী, যাঁদের বয়স প্রায় ৫০ বছর বলে অনুমান করা হচ্ছে, ভিড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত তিনজনকে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট সুনিতা রাওয়াত মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং মৃতদের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন।
কুবরেশ্বর ধাম, যা বিখ্যাত ধর্মীয় প্রচারক পণ্ডিত প্রদীপ মিশ্রের সঙ্গে যুক্ত, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি প্রধান তীর্থস্থান হিসেবে উঠে এসেছে, বিশেষ করে শ্রাবণ মাসে। এই মন্দিরে প্রতিবছর লক্ষাধিক ভক্ত সমাগম করেন, বিশেষ করে শিব মহাপুরাণ কথা এবং রুদ্রাক্ষ বিতরণের মতো অনুষ্ঠানে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসন এই বছর ২ লক্ষের বেশি তীর্থযাত্রীর সমাগমের প্রত্যাশা করেছিল। তবে, ভিড় নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মন্দিরের প্রবেশপথে এবং দর্শনের ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা ছিল, যা এই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
এই ঘটনা কুবরেশ্বর ধামে ভিড়ের কারণে ঘটে যাওয়া প্রথম দুর্ঘটনা নয়। ২০২৩ সালে এই মন্দিরে শিব মহাপুরাণ কথা চলাকালীন পাঁচ দিনে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল। গত বছরও (২০২৪) রুদ্রাক্ষ মহোৎসবের সময় একজনের মৃত্যু এবং একজন ডেপুটি রেঞ্জারের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এই ঘটনাগুলো মন্দিরে ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির বিষয়টি বারবার সামনে এনেছে।
এই দুর্ঘটনার পর রাজ্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সিহোরে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এক্স প্ল্যাটফর্মে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “প্রদীপ মিশ্রের কুবরেশ্বর ধামে এই ধরনের দুর্ঘটনার জন্য কি কোনও দায় নেওয়া হবে?”
আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “প্রতি বছর এই মন্দিরে এমন ঘটনা ঘটছে, তবুও প্রশাসন কেন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না?”পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণ খতিয়ে দেখছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই ঘটনায় কুবরেশ্বর ধামে কাওড় যাত্রা এবং রুদ্রাক্ষ বিতরণ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের উপর ভক্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আরও জোরদার করার দাবি উঠেছে।
ভুয়ো ভোটার কাণ্ডে ডেটা নিয়োগে নজর, রিপোর্ট তলব কমিশনের
এই ঘটনা ধর্মীয় সমাগমে ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তার গুরুত্বকে পুনরায় সামনে এনেছে। কুবরেশ্বর ধামের মতো জনপ্রিয় তীর্থস্থানে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম ঘটে, এবং এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আরও কার্যকর পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়েছে।