কলকাতা: রাজ্যে ভোটার তালিকায় ভুতূড়ে (Fake Voters in Bengal) নামের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের হাতে। স্পষ্টতই দোষী প্রমাণিত হয়েছেন নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক (ইআরও)-রা। তাঁদের সরাসরি গাফিলতির ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে দফতর দাবি করছে। এই বিষয়ে রাজারহাট-গোপালপুর ও নন্দকুমার বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও-দের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। কমিশন এখন সিদ্ধান্ত নেবে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চারটি বিধানসভা কেন্দ্র— ময়না, রাজারহাট, নন্দকুমার ও রাজারহাট-গোপালপুর— এসব জায়গার ভোটার তালিকায় বিপুল সংখ্যক ভুতূড়ে নাম উঠে এসেছে। এই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হওয়া ২১২টি নাম সন্দেহজনক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই নামগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত নথি যথাযথ ছিল না। বিএলওদের দিয়ে যাচাইও করা হয়নি। তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, ইআরও-দের লগ ইন আইডি ও ওটিপি বেআইনিভাবে অফিসের অন্যান্য কর্মীদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছিল। ফলে, ডেটা এন্ট্রি অপারেটররা অবাধে নতুন নাম যুক্ত করার পাশাপাশি, পুরনো বৈধ নামও তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে বলে অভিযোগ।
এই ইস্যুর কেন্দ্রে রয়েছেন ইআরও অফিসে কর্মরত কিছু অস্থায়ী কর্মী ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটররা। জানা গিয়েছে, এদের একটা বড় অংশই বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা হয়েছে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর সমস্ত জেলার জেলাশাসক ও জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছে, আগামী শুক্রবারের মধ্যে এইসব কর্মীদের বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। কোন বিধানসভা কেন্দ্রে কতজন অস্থায়ী কর্মী ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করা হয়েছে, কোন এজেন্সির মাধ্যমে, তা-ও স্পষ্টভাবে জানাতে বলা হয়েছে।
নির্বাচনী দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, “ইআরও’দের অন্ধ বিশ্বাস এবং অমনোযোগিতার সুযোগ নিয়েই ভুয়ো ভোটারের তালিকা তৈরি হয়েছে। কমিশনের পোর্টালে লগ ইন করার ওটিপি সরবরাহ করেও তাঁরা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। পুরো বিষয়টি বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
আরও উদ্বেগের বিষয় হল, গত পাঁচ বছরে কোন কোন এজেন্সি এই অস্থায়ী কর্মীদের সরবরাহ করেছে, তা নিয়েও খোঁজ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কারণ তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে যে, এই পাঁচ বছর ধরেই একই ধাঁচে কাজ চালিয়ে গেছে কিছু অসাধু কর্মী। এখন প্রশ্ন উঠছে, শুধুই কি ইআরওদের গাফিলতি, না কি এর পেছনে রয়েছে কোনো বৃহৎ চক্র?
বিরোধী দলগুলিও এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তাদের অভিযোগ, রাজ্যে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করে ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম ঢোকানো হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য আগামী নির্বাচনে ভোট কারচুপি।
তবে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর স্পষ্ট করেছে, তারা এবিষয়ে কঠোর অবস্থান নেবে। তদন্ত চলছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনায় রাজ্যের নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন উঠেছে। ভোটার তালিকায় ‘ভুতূড়ে’ নামের অন্তর্ভুক্তি শুধু নির্বাচন ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকেই আঘাত করে না, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেও বিপন্ন করে তোলে। এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন কী পদক্ষেপ নেয় এই গুরুতর অনিয়মের বিরুদ্ধে।