স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগে দিল্লির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও কৌশলগত স্থানে বড়সড় নিরাপত্তার ফাঁস (Delhi security breach) ধরল। লালকেল্লায় জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল পাঁচ বাংলাদেশি নাগরিক, যাদের সবাই অনুপ্রবেশকারী বলে দাবি করেছে দিল্লি পুলিশ। পাঁচজনকে গ্রেফতার করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের বিশেষ সেল।
দিল্লি পুলিশের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ধৃত পাঁচজনের বয়স ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যে। তারা দিল্লিতেই নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। কিন্তু কোনও বৈধ নথি ছিল না তাদের কাছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ধৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু বাংলাদেশি পরিচয়পত্র ও নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনাকে ঘিরে রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
দিল্লি পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘এই পাঁচজন ব্যক্তি জোর করে লালকেল্লার প্রধান গেটের দিক থেকে ঢোকার চেষ্টা করে। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তৎক্ষণাৎ নিরাপত্তারক্ষীরা হস্তক্ষেপ করে। পরে পুলিশ এসে পাঁচজনকেই গ্রেফতার করে। তদন্তে জানা গিয়েছে, এরা সবাই অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে এবং বর্তমানে দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করত।’’
এই ঘটনায় আরও বড়সড় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে, যখন জানা যায় যে লালকেল্লার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সাতজন পুলিশকর্মীকে ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কনস্টেবল ও হেড কনস্টেবল পদমর্যাদার আধিকারিকরাও।
দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত শনিবার একটি বিশেষ ড্রিল পরিচালনা করে পুলিশের স্পেশাল সেল। সেই ড্রিলে কিছু অফিসার সাধারণ পোশাকে একটি ডামি বোমা নিয়ে লালকেল্লায় প্রবেশ করেন। কিন্তু কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীরা সেই বোমা শনাক্ত করতে ব্যর্থ হন। এটাই প্রমাণ করে দেয় যে, নিরাপত্তায় ফাঁক আছে এবং তা বড় ধরনের বিপদের কারণ হতে পারে। সেই কারণেই এই সাতজন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে।
সূত্রের খবর, ধৃত পাঁচজন বাংলাদেশিকে আপাতত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা জানতে চাইছেন, তারা কীভাবে ভারতে ঢুকল, কার মাধ্যমে কাজ পেল এবং কী উদ্দেশ্যে তারা লালকেল্লায় ঢোকার চেষ্টা করছিল। তদন্তে আন্তর্জাতিক অনুপ্রবেশকারী চক্রের যোগসূত্রের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর একাংশের মতে, স্বাধীনতা দিবসের আগে এই ধরনের প্রবেশের চেষ্টাকে শুধু “ভবঘুরে” কার্যকলাপ হিসেবে দেখলে ভুল হবে। কারণ, লালকেল্লা থেকে প্রতি বছর ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেই উপলক্ষে দেশজুড়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশকারীদের এভাবে প্রবেশের চেষ্টা যথেষ্ট সন্দেহজনক ও আশঙ্কার।
গোটা ঘটনায় কেন্দ্র সরকারও কড়া নজর রাখছে বলে জানা গিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দিল্লি পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে এবং কীভাবে এই ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটল, সেই বিষয়েও বিশদ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
7 police personnel, including constables and head constables, deployed for the security of the Red Fort, have been suspended due to negligence in security. The Delhi Police conducts daily drills as part of preparations for the program scheduled for 15th August. A team of the…
— ANI (@ANI) August 4, 2025
অন্যদিকে, রাজনৈতিক মহলেও ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিজেপির এক মুখপাত্র বলেছেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করে দিল্লির কড়া নিরাপত্তার ভেতরেও ফাঁক রয়ে গেছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের এই ধরনের চেষ্টায় দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, দিল্লিতে প্রতিদিনই বহু অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি নাগরিক কাজের সন্ধানে প্রবেশ করছে, এই অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই উঠে আসছে। কিন্তু এই প্রথম তারা সরাসরি একটি জাতীয় স্তরের প্রতীকী ও নিরাপত্তা-সংবেদনশীল স্থানে ঢোকার চেষ্টা করল। ঘটনাটি সারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আগামী দিনে দিল্লি-সহ দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভ ও স্থানে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
এই মুহূর্তে ধৃতদের জেরা চলছে এবং তদন্তে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে আরও কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।